Agricillin

সারসংক্ষেপ

বেনজাইলপেনিসিলিন (Agricillin), যা পেনিসিলিন জি (Penicillin G) নামেও পরিচিত, একটি বিটা-ল্যাকটাম (beta-lactam) শ্রেণীর অ্যান্টিবায়োটিক। এটি পেনিসিলিন পরিবারের প্রথম আবিষ্কৃত এবং বহুল ব্যবহৃত একটি সদস্য। এটি প্রধানত গ্রাম-পজিটিভ (Gram-positive) ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকরী। এর কার্যকারিতা ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীর (cell wall) সংশ্লেষণ প্রক্রিয়াকে বাধা দেওয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। পেটের অ্যাসিডে এটি নষ্ট হয়ে যায় বলে সাধারণত ইনজেকশনের মাধ্যমে (শিরায় বা মাংসে) প্রয়োগ করা হয়।

ব্যাকগ্রাউন্ড

১৯২৮ সালে স্যার আলেকজান্ডার ফ্লেমিং কর্তৃক পেনিসিলিয়াম নোটেটাম (Penicillium notatum) নামক ছত্রাক থেকে পেনিসিলিন আবিষ্কৃত হয়, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। বেনজাইলপেনিসিলিন হলো সেই প্রাকৃতিক পেনিসিলিনের প্রথম রূপ যা চিকিৎসাগতভাবে ব্যবহৃত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এর ব্যাপক উৎপাদন শুরু হয় এবং এটি অসংখ্য জীবন রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সময়ের সাথে সাথে অনেক ব্যাকটেরিয়া এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা (resistance) অর্জন করলেও, এটি এখনও সিফিলিস, স্ট্রেপ্টোকক্কাল সংক্রমণ এবং অন্যান্য সংবেদনশীল জীবাণুর বিরুদ্ধে প্রথম সারির চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

ইঙ্গিত

বেনজাইলপেনিসিলিন নিম্নলিখিত সংবেদনশীল ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য নির্দেশিত:

  • স্ট্রেপ্টোকক্কাল সংক্রমণ: যেমন স্ট্রেপ থ্রোট (Strep throat), স্কারলেট ফিভার (scarlet fever), বাতজ্বর (rheumatic fever) প্রতিরোধ, এবং স্ট্রেপ্টোকক্কাল নিউমোনিয়া ও মেনিনজাইটিস।
  • সিফিলিস (Syphilis): ট্রেপোনেমা প্যালিডাম (Treponema pallidum) দ্বারা সৃষ্ট এই যৌনবাহিত রোগের সকল পর্যায়ে (প্রাথমিক, মাধ্যমিক, তৃতীয় এবং নিউরোসিফিলিস) এটি পছন্দের চিকিৎসা।
  • মেনিনগোকক্কাল রোগ (Meningococcal disease): নেইসেরিয়া মেনিনজাইটিডিস (Neisseria meningitidis) দ্বারা সৃষ্ট মেনিনজাইটিস এবং সেপসিস।
  • অ্যাকটিনোমাইকোসিস (Actinomycosis): অ্যাকটিনোমাইসেস ইজরায়েলি (Actinomyces israelii) দ্বারা সৃষ্ট সংক্রমণ।
  • অ্যানথ্রাক্স (Anthrax): ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস (Bacillus anthracis) দ্বারা সৃষ্ট।
  • গ্যাস গ্যাংগ্রিন (Gas gangrene): ক্লোস্ট্রিডিয়াম পারফ্রিনজেনস (Clostridium perfringens) দ্বারা সৃষ্ট।
  • লেপ্টোস্পাইরোসিস (Leptospirosis) এবং র‍্যাট-বাইট ফিভার (Rat-bite fever)
  • এন্ডোকার্ডাইটিস (Endocarditis): সংবেদনশীল স্ট্রেপ্টোকক্কাস বা এন্টারোকক্কাস দ্বারা সৃষ্ট হৃৎপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ স্তরের সংক্রমণ।

Associated Conditions

বেনজাইলপেনিসিলিন সাধারণত নিম্নলিখিত অবস্থাগুলির সাথে সম্পর্কিত bacterial infection-এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়:

  • ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিস (Bacterial Meningitis)
  • নিউমোনিয়া (Pneumonia)
  • সেপ্টিসেমিয়া বা সেপসিস (Septicemia/Sepsis)
  • পেরিকার্ডাইটিস (Pericarditis)
  • বাতজ্বর (Rheumatic Fever)
  • সিফিলিস (Syphilis)
  • অস্টিওমাইলাইটিস (Osteomyelitis) বা হাড়ের সংক্রমণ
  • ত্বক এবং নরম টিস্যুর সংক্রমণ (Skin and Soft Tissue Infections)

বিরোধীতা এবং ব্ল্যাকবক্স সতর্কতা

বেনজাইলপেনিসিলিনের জন্য কোনো ব্ল্যাকবক্স সতর্কতা নেই। তবে এর ব্যবহারে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিরোধিতা রয়েছে।

বিরোধীতা:

  • পেনিসিলিন বা অন্য কোনো বিটা-ল্যাকটাম অ্যান্টিবায়োটিক (যেমন, সেফালোস্পোরিন, কার্বাপেনেম) এর প্রতি পূর্বে গুরুতর অতিসংবেদনশীলতা বা অ্যানাফাইল্যাকটিক (anaphylactic) প্রতিক্রিয়ার ইতিহাস থাকলে এর ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
  • এই ঔষধ ব্যবহারের আগে পেনিসিলিন অ্যালার্জির ইতিহাস সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।

ফার্মাকোডাইনামিক্স

বেনজাইলপেনিসিলিন একটি ব্যাকটেরিসাইডাল (bactericidal) বা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসকারী অ্যান্টিবায়োটিক। এটি সক্রিয়ভাবে বিভাজিত হতে থাকা সংবেদনশীল ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীর সংশ্লেষণে হস্তক্ষেপ করে। কোষ প্রাচীর ব্যাকটেরিয়ার অভ্যন্তরীণ অসমোটিক চাপ বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য। কোষ প্রাচীর তৈরি হতে না পারলে, ব্যাকটেরিয়া অসমোটিক চাপের কারণে ফুলে ওঠে এবং ফেটে যায় (lysis), যার ফলে ব্যাকটেরিয়া মারা যায়। এটি মানুষের কোষকে প্রভাবিত করে না কারণ মানুষের কোষে কোনো কোষ প্রাচীর থাকে না।

কর্ম প্রক্রিয়া

বেনজাইলপেনিসিলিনের কর্ম প্রক্রিয়াটি সুনির্দিষ্টভাবে ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীরের পেপটিডোগ্লাইক্যান (peptidoglycan) স্তরকে লক্ষ্য করে।

  1. পেনিসিলিন-বাইন্ডিং প্রোটিন (PBPs) এর সাথে আবদ্ধ হওয়া: বেনজাইলপেনিসিলিন ব্যাকটেরিয়ার কোষ ঝিল্লিতে অবস্থিত পেনিসিলিন-বাইন্ডিং প্রোটিন (PBPs) নামক এনজাইমগুলোর সাথে আবদ্ধ হয়। এই PBPs গুলো পেপটিডোগ্লাইক্যান চেইনের মধ্যে ক্রস-লিঙ্কিং বা আড়াআড়ি সংযোগ তৈরির জন্য দায়ী, যা কোষ প্রাচীরকে শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল করে।
  2. ট্রান্সপেপটিডেশন প্রক্রিয়ায় বাধা: PBPs-এর সাথে আবদ্ধ হয়ে বেনজাইলপেনিসিলিন ট্রান্সপেপটিডেশন (transpeptidation) নামক চূড়ান্ত ধাপটিকে বাধা দেয়। এর ফলে, নতুন পেপটিডোগ্লাইক্যান স্তর সঠিকভাবে তৈরি হতে পারে না।
  3. কোষ প্রাচীরের দুর্বলতা এবং লাইসিস: দুর্বল এবং ত্রুটিপূর্ণ কোষ প্রাচীর ব্যাকটেরিয়ার অভ্যন্তরীণ উচ্চ অসমোটিক চাপ সহ্য করতে পারে না। ফলে, পানি কোষের ভিতরে প্রবেশ করে এবং কোষটি ফেটে গিয়ে (autolysis) মারা যায়।

মাত্রা

বেনজাইলপেনিসিলিনের মাত্রা সংক্রমণের ধরন, তীব্রতা, রোগীর বয়স এবং বৃক্কের (কিডনি) কার্যকারিতার উপর নির্ভর করে। এটি সাধারণত 'ইউনিট'-এ পরিমাপ করা হয় (১ মিলিয়ন ইউনিট ≈ ৬০০ মিলিগ্রাম)।

  • প্রাপ্তবয়স্ক (মাঝারি থেকে গুরুতর সংক্রমণ): দৈনিক ১২ থেকে ২৪ মিলিয়ন ইউনিট, যা প্রতি ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা অন্তর অন্তর বিভক্ত করে ইন্ট্রাভেনাস (IV) ইনফিউশন বা ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হয়।
  • নিউরোসিফিলিস (Neurosyphilis): প্রতি ৪ ঘণ্টা অন্তর ৩ থেকে ৪ মিলিয়ন ইউনিট ইন্ট্রাভেনাস (IV) পথে, ১০ থেকে ১৪ দিনের জন্য।
  • মেনিনগোকক্কাল মেনিনজাইটিস: প্রতি ৪ ঘণ্টা অন্তর ৪ মিলিয়ন ইউনিট ইন্ট্রাভেনাস (IV) পথে।
  • শিশুদের ক্ষেত্রে: মাত্রা শরীরের ওজন অনুযায়ী গণনা করা হয়। সাধারণত, দৈনিক ১,০০,০০০ থেকে ৪,০০,০০০ ইউনিট/কেজি, যা ৪ থেকে ৬টি বিভক্ত মাত্রায় দেওয়া হয়।
  • নবজাতক: বয়স এবং ওজনের উপর ভিত্তি করে কম মাত্রায় দেওয়া হয়।

কিডনির কার্যকারিতা কমে গেলে (Renal impairment) মাত্রা সমন্বয় করা অপরিহার্য।

সেবনবিধি

বেনজাইলপেনিসিলিন শুধুমাত্র প্যারেন্টেরাল (parenteral) বা ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়।

  1. ইন্ট্রাভেনাস (IV) ইনজেকশন/ইনফিউশন: এটি সবচেয়ে সাধারণ প্রয়োগ পদ্ধতি। পাউডারটিকে জীবাণুমুক্ত পানি বা স্যালাইন দিয়ে घोलানো হয় এবং তারপরে ধীরে ধীরে শিরার মধ্যে ইনজেক্ট করা হয় (সাধারণত ৩-৫ মিনিট ধরে) অথবা স্যালাইনের সাথে মিশিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে (যেমন ৩০-৬০ মিনিট) ইনফিউশন হিসেবে দেওয়া হয়। দ্রুত ইনজেকশন দিলে খিঁচুনি হতে পারে।
  2. ইন্ট্রামাসকুলার (IM) ইনজেকশন: এটি গভীর মাংসপেশীতে (যেমন নিতম্ব বা উরুর বড় পেশী) প্রয়োগ করা হয়। এই পদ্ধতিটি বেশ বেদনাদায়ক হতে পারে। তাই সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী ফর্মুলেশন (যেমন, বেনজাথিন পেনিসিলিন) ছাড়া নিয়মিত বেনজাইলপেনিসিলিনের জন্য এটি কম ব্যবহৃত হয়।

ঔষধটি প্রয়োগের আগে পাউডারটি সম্পূর্ণরূপে দ্রবীভূত হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে এবং দ্রবণের রঙ বা স্বচ্ছতা পরীক্ষা করে নিতে হবে।

কাজ করতে কত সময় লাগে?

ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করার সাথে সাথেই বেনজাইলপেনিসিলিন রক্তপ্রবাহে পৌঁছে যায় এবং দ্রুত কাজ শুরু করে। ইন্ট্রাভেনাস (IV) প্রয়োগের কয়েক মিনিটের মধ্যেই রক্তে এর সর্বোচ্চ ঘনত্বে পৌঁছায়। সংক্রমণের ক্লিনিকাল উন্নতি সাধারণত চিকিৎসা শুরু করার ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পরিলক্ষিত হয়।

শোষণ

যেহেতু বেনজাইলপেনিসিলিন পাকস্থলীর অ্যাসিডে অস্থিতিশীল, তাই এটি মুখে গ্রহণ করলে শোষণ (absorption) খুবই কম এবং অনিয়মিত। ইন্ট্রামাসকুলার (IM) ইনজেকশনের পর এটি দ্রুত এবং সম্পূর্ণরূপে শোষিত হয় এবং ১৫ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে রক্তে সর্বোচ্চ ঘনত্বে পৌঁছায়। ইন্ট্রাভেনাস (IV) প্রয়োগে শোষণ প্রক্রিয়াটি এড়িয়ে যাওয়া হয় এবং ঔষধটি সরাসরি রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে।

বিতরণের পরিমাণ

বেনজাইলপেনিসিলিন শরীরের বেশিরভাগ টিস্যু এবং তরলে ভালোভাবে বিতরণ (distribution) হয়, যেমন ফুসফুস, লিভার, কিডনি, পেশী, এবং প্লুরাল (pleural), পেরিকার্ডিয়াল (pericardial) ও সাইনোভিয়াল (synovial) ফ্লুইড। তবে, স্বাভাবিক অবস্থায় মস্তিষ্ক-মেরুরজ্জুর তরলে (cerebrospinal fluid - CSF) এর প্রবেশ সীমিত। মেনিনজেস (meninges) বা মস্তিষ্কের আবরণে প্রদাহ থাকলে (যেমন মেনিনজাইটিসের ক্ষেত্রে), এর প্রবেশ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়, যা মস্তিষ্কের সংক্রমণে এর কার্যকারিতা বাড়ায়। এর বিতরণের পরিমাণ (Volume of Distribution) প্রায় ০.৩৫ লিটার/কেজি।

প্রোটিন বাইন্ডিং

রক্তরসে (plasma), বেনজাইলপেনিসিলিন মাঝারি পরিমাণে প্লাজমা প্রোটিনের সাথে আবদ্ধ হয়, যার পরিমাণ প্রায় ৬০%।

বিপাক

বেনজাইলপেনিসিলিনের একটি ছোট অংশ (প্রায় ২০%) লিভারে বিপাকিত (metabolism) হয়ে নিষ্ক্রিয় মেটাবোলাইটে (metabolites) পরিণত হয়, যার মধ্যে প্রধান হলো পেনিসিলোইক অ্যাসিড (penicilloic acid)।

অর্ধ জীবন

স্বাভাবিক কিডনি কার্যকারিতা সম্পন্ন প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে, বেনজাইলপেনিসিলিনের অর্ধ-জীবন (half-life) বেশ সংক্ষিপ্ত, প্রায় ৩০ থেকে ৬০ মিনিট। নবজাতক এবং কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এর অর্ধ-জীবন দীর্ঘায়িত হয়।

নির্মূল

বেনজাইলপেনিসিলিন প্রধানত কিডনির মাধ্যমে শরীর থেকে দ্রুত নিষ্কাশিত (elimination) হয়। প্রায় ৮০% ঔষধ অপরিবর্তিত অবস্থায় রেনাল টিউবুলার সিক্রেশন (renal tubular secretion) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এবং বাকি অংশ গ্লোমেরুলার ফিল্ট্রেশন (glomerular filtration) এর মাধ্যমে প্রস্রাবের সাথে বেরিয়ে যায়। এই দ্রুত নিষ্কাশনের কারণেই ঘন ঘন ডোজ দেওয়ার প্রয়োজন হয়।

ঔষধের মিথস্ক্রিয়া

  • প্রোবেনেসিড (Probenecid): এই ঔষধটি কিডনিতে বেনজাইলপেনিসিলিনের টিউবুলার সিক্রেশনকে বাধা দেয়, যার ফলে এর অর্ধ-জীবন দীর্ঘায়িত হয় এবং রক্তে ঘনত্ব বেড়ে যায়। কখনও কখনও এই প্রভাবটিকে চিকিৎসার সুবিধার্থে ব্যবহার করা হয়।
  • টেট্রাসাইক্লিন (Tetracyclines): এই ব্যাকটেরিওস্ট্যাটিক (bacteriostatic) অ্যান্টিবায়োটিক পেনিসিলিনের ব্যাকটেরিসাইডাল (bactericidal) কার্যকারিতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে, তাই এদের একত্রে ব্যবহার এড়ানো উচিত।
  • মেথোট্রেক্সেট (Methotrexate): পেনিসিলিন মেথোট্রেক্সেটের নিষ্কাশন কমাতে পারে, যার ফলে মেথোট্রেক্সেটের বিষাক্ততার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • ওয়ারফারিন (Warfarin): পেনিসিলিন অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়াকে প্রভাবিত করে ভিটামিন কে সংশ্লেষণ কমাতে পারে, যা ওয়ারফারিনের অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট (anticoagulant) প্রভাবকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।

রোগ মিথস্ক্রিয়া

  • কিডনি রোগ (Renal Impairment): কিডনির কার্যকারিতা কমে গেলে বেনজাইলপেনিসিলিনের নিষ্কাশন ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। ফলে ঔষধটি শরীরে জমা হয়ে বিষাক্ততা (যেমন, খিঁচুনি) সৃষ্টি করতে পারে। এই রোগীদের ক্ষেত্রে ডোজ কমানো বা ডোজের মধ্যবর্তী সময় বাড়ানো আবশ্যক।
  • অ্যালার্জি বা হাঁপানি (Allergy or Asthma): অ্যাটোপিক (atopic) ব্যক্তিদের মধ্যে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

খাদ্য মিথস্ক্রিয়া

যেহেতু বেনজাইলপেনিসিলিন ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হয়, তাই এর সাথে সরাসরি কোনো খাদ্য মিথস্ক্রিয়া নেই।

ব্যবহারের দিকনির্দেশনা

চিকিৎসা শুরুর আগে রোগীর পেনিসিলিন অ্যালার্জির ইতিহাস সাবধানে পর্যালোচনা করতে হবে। অ্যানাফাইল্যাক্সিসের মতো গুরুতর প্রতিক্রিয়ার চিকিৎসার জন্য অ্যাড্রেনালিন (এপিনেফ্রিন) এবং অন্যান্য জরুরি সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখতে হবে। চিকিৎসার সম্পূর্ণ কোর্স শেষ করা অপরিহার্য, এমনকি যদি উপসর্গগুলো আগেভাগেই কমে যায়। অসম্পূর্ণ চিকিৎসা সংক্রমণের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারে এবং অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

প্রতিনির্দেশনা

পেনিসিলিন বা অন্যান্য বিটা-ল্যাকটাম অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি অ্যানাফাইল্যাকটিক প্রতিক্রিয়ার ইতিহাস থাকলে বেনজাইলপেনিসিলিন ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে প্রতিনির্দেশিত (contraindicated)।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

সবচেয়ে সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো অতিসংবেদনশীলতা বা অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া।

  • সাধারণ: ত্বকে ফুসকুড়ি (skin rash), আর্টিকারিয়া (urticaria) বা আমবাত, চুলকানি। ইনজেকশনের স্থানে ব্যথা বা প্রদাহ।
  • গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল: ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব।
  • জারিশ-হারক্সহাইমার প্রতিক্রিয়া (Jarisch-Herxheimer Reaction): সিফিলিসের চিকিৎসায় এটি ঘটতে পারে, যেখানে মৃত ব্যাকটেরিয়া থেকে বিষাক্ত পদার্থ নিঃসরণের কারণে জ্বর, কাঁপুনি, মাথাব্যথা এবং পেশীতে ব্যথা হয়। এটি সাধারণত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে যায়।

বিরূপ প্রভাব

বিরল কিন্তু গুরুতর বিরূপ প্রভাবগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • অ্যানাফাইল্যাক্সিস (Anaphylaxis): এটি একটি জীবন-হুমকির কারণ হতে পারে এমন তীব্র অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া, যার লক্ষণগুলো হলো শ্বাসকষ্ট, রক্তচাপ কমে যাওয়া, মুখ বা গলা ফুলে যাওয়া।
  • নিউরোটক্সিসিটি (Neurotoxicity): খুব উচ্চ মাত্রায় বা কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে খিঁচুনি (seizures), বিভ্রান্তি, বা হ্যালুসিনেশন হতে পারে।
  • রক্ত সংক্রান্ত: হেমোলাইটিক অ্যানিমিয়া (Hemolytic anemia), নিউট্রোপেনিয়া (neutropenia), এবং থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া (thrombocytopenia) হতে পারে।
  • ইন্টারস্টিশিয়াল নেফ্রাইটিস (Interstitial Nephritis): কিডনির প্রদাহ।

গর্ভাবস্থায় ব্যবহার

বেনজাইলপেনিসিলিন গর্ভাবস্থায় ব্যবহারের জন্য নিরাপদ বলে বিবেচিত হয় (Pregnancy Category B)। এটি প্লাসেন্টা অতিক্রম করে, তবে মানুষের উপর গবেষণায় ভ্রূণের উপর কোনো ক্ষতিকর প্রভাব দেখা যায়নি। গর্ভাবস্থায় সিফিলিসের মতো সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য এটি একটি অপরিহার্য ঔষধ।

স্তন্যদানকালে ব্যবহার

বেনজাইলপেনিসিলিন অল্প পরিমাণে মায়ের দুধে নিঃসৃত হয়। এটি সাধারণত শিশুর জন্য নিরাপদ বলে মনে করা হয়। তবে, এটি শিশুর অন্ত্রের মাইক্রোফ্লোরাকে পরিবর্তন করতে পারে, যার ফলে ডায়রিয়া বা ক্যানডিডিয়াসিস (candidiasis) হতে পারে।また, শিশুর মধ্যে অ্যালার্জিক সংবেদনশীলতা তৈরির একটি তাত্ত্বিক ঝুঁকি রয়েছে।

বিষাক্ততা

বেনজাইলপেনিসিলিনের থেরাপিউটিক ইনডেক্স (therapeutic index) বেশ প্রশস্ত, অর্থাৎ এর বিষাক্ততার ঝুঁকি কম। বিষাক্ততার প্রধান প্রকাশ হলো নিউরোটক্সিসিটি (খিঁচুনি), যা সাধারণত খুব উচ্চ মাত্রায় বা কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়।

সতর্কতা

  • প্রতিটি ডোজ দেওয়ার আগে অ্যালার্জির কোনো লক্ষণ দেখা দিচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
  • দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসায়, কিডনি, লিভার এবং হেমাটোলজিকাল (রক্ত) সিস্টেমের কার্যকারিতা পর্যায়ক্রমিক নিরীক্ষণের প্রয়োজন হতে পারে।
  • দ্রুত ইন্ট্রাভেনাস ইনজেকশন এড়িয়ে চলতে হবে, কারণ এটি খিঁচুনির ঝুঁকি বাড়ায়।
  • সোডিয়াম বা পটাসিয়াম লবণের ফর্মুলেশন ব্যবহার করার সময়, ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতার ঝুঁকিযুক্ত রোগীদের (যেমন, হৃদরোগ বা কিডনি রোগে আক্রান্ত) ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

মাত্রাধিক্যতা

মাত্রাধিক্যতার (overdose) প্রধান লক্ষণ হলো স্নায়ুতন্ত্রের অতি-উদ্দীপনা, যার ফলে বিভ্রান্তি, পেশী কাঁপুনি এবং খিঁচুনি হতে পারে। বিশেষ করে কিডনি অকার্যকর রোগীদের মধ্যে এই ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।

মাত্রাধিক্যতার ক্ষেত্রে, ঔষধ প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। চিকিৎসা মূলত সহায়ক (supportive)। খিঁচুনির জন্য অ্যান্টিকনভালস্যান্ট (anticonvulsant) যেমন ডায়াজেপাম ব্যবহার করা যেতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে, হেমোডায়ালাইসিস (hemodialysis) এর মাধ্যমে রক্ত থেকে ঔষধটি অপসারণ করা যেতে পারে।

বিপরীত

বেনজাইলপেনিসিলিনের কোনো নির্দিষ্ট বিপরীত (antidote) নেই। এর বিষাক্ততার চিকিৎসা সহায়ক এবং লক্ষণ-ভিত্তিক।

সংরক্ষণ

  • শুকনো পাউডার ফ্রিজে (২° থেকে ৮° সেলসিয়াস) বা নিয়ন্ত্রিত ঘরের তাপমাত্রায় (২০° থেকে ২৫° সেলসিয়াস) সংরক্ষণ করতে হবে।
  • আলো এবং আর্দ্রতা থেকে দূরে রাখুন।
  • একবার घोलানো হলে (reconstituted), দ্রবণটি ঘরের তাপমাত্রায় বা ফ্রিজে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্থিতিশীল থাকে (সাধারণত ঘরের তাপমাত্রায় ২৪ ঘণ্টা এবং ফ্রিজে কয়েক দিন)। প্যাকেজের নির্দেশাবলী অনুসরণ করা উচিত কারণ স্থিতিশীলতা প্রস্তুতকারক এবং ব্যবহৃত তরলের উপর নির্ভর করে।
  • নির্দিষ্ট সময়ের পরে অব্যবহৃত দ্রবণ ফেলে দিতে হবে।

ব্যবহার

অ্যাক্টিনোমাইকোসিস, তীব্র বাতজ্বর, অ্যানথ্রাক্স, রক্তপ্রবাহের সংক্রমণ, বোটুলিজম, ডিপথেরিয়া, এম্পেমা, এন্ডোকার্ডাইটিস, ইরিসিপেলোথ্রিক্স সংক্রমণের কারণে এন্ডোকার্ডাইটিস, Fusospirochetosis, গ্যাস গ্যাংগ্রিন, গনোকোকাল সংক্রমণ, গ্রাম-নেতিবাচক ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, হ্যাভারহিল জ্বর, লিস্টেরিয়া সংক্রমণ, মেনিনজাইটিস, মেনিনজোকোককাল মেনিনজাইটিসের, পাস্তুরেলা সংক্রমণ, পেরিকার্ডাইটিস, নিউমোনিয়া, ইঁদুর কামড়ে জ্বর, সিফিলিস, টিটেনাস

Agricillin এর দাম কত? Agricillin এর দাম

Agricillin in Bangla
Agricillin in bangla
বাণিজ্যিক নাম Agricillin
জেনেরিক Benzylpenicillin
ধরণ
পরিমাপ
দাম
চিকিৎসাগত শ্রেণি
উৎপাদনকারী
উপলভ্য দেশ USA
সর্বশেষ সম্পাদনা January 7, 2025 at 1:49 am

খাওয়ার নিয়ম / ব্যবহারের নিয়ম

Agricillin খাওয়ার নিয়ম / ব্যবহারের নিয়ম

আরো বিস্তারিত দেখুন Agricillin

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

সতর্কতা

মিথস্ক্রিয়া

গর্ভাবস্থাকালীন ব্যবহার

বৈপরীত্য

অতিরিক্ত সতর্কতা

তীব্র ওভারডোজ

অন্যান্য ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া

সংরক্ষণ

*** Taking medicines without doctor's advice can cause long-term problems.
Share