Cevitol

সারসংক্ষেপ

সোডিয়াম অ্যাসকরবেট (Sodium Ascorbate) হলো ভিটামিন সি (অ্যাসকরবিক অ্যাসিড) এর একটি খনিজ লবণ (mineral salt)। এর রাসায়নিক সূত্র C6H7NaO6। এটি অ্যাসকরবিক অ্যাসিডের তুলনায় কম অম্লীয় এবং পানিতে সহজেই দ্রবণীয়। এই কারণে, যাদের পেটে অ্যাসিডের সমস্যা আছে বা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড সহ্য করতে পারেন না, তাদের জন্য এটি একটি ভালো বিকল্প। এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ার জন্য অপরিহার্য। এটি খাদ্য সংযোজক (food additive) হিসেবেও ব্যবহৃত হয় এবং এর E নম্বর হলো E301।

ব্যাকগ্রাউন্ড

সোডিয়াম অ্যাসকরবেট হলো অ্যাসকরবিক অ্যাসিড (ভিটামিন সি) এবং সোডিয়াম বাইকার্বোনেটের সংমিশ্রণ। এই সংমিশ্রণের ফলে একটি বাফার্ড (buffered) বা কম অম্লীয় প্রকৃতির ভিটামিন সি তৈরি হয়, যা পেটের জন্য সহনশীল। অ্যাসকরবিক অ্যাসিডের মতোই এটি শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়, কিন্তু শরীর নিজে থেকে এটি তৈরি করতে পারে না। তাই খাদ্য বা সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে এটি গ্রহণ করা আবশ্যক। এর জৈব উপলব্ধতা (bioavailability) অ্যাসকরবিক অ্যাসিডের মতোই, অর্থাৎ শরীর এটি সহজেই শোষণ করতে পারে।

ইঙ্গিত

সোডিয়াম অ্যাসকরবেট নিম্নলিখিত অবস্থাগুলির প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার জন্য নির্দেশিত:

  • ভিটামিন সি-এর অভাবজনিত রোগ, যেমন স্কার্ভি (Scurvy), যার লক্ষণগুলো হলো মাড়ি থেকে রক্তপাত, দাঁত নড়বড়ে হওয়া, ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ এবং ক্লান্তি।
  • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে বিভিন্ন ধরণের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধ করা।
  • সাধারণ সর্দি-কাশির তীব্রতা এবং স্থায়িত্ব কমানো।
  • ক্ষতস্থান দ্রুত শুকানো এবং হাড় ভাঙা নিরাময়ে সহায়তা করা।
  • কানেক্টিভ টিস্যু বা সংযোজক কলার কোলাজেন (Collagen) গঠনে সহায়তা করা, যা ত্বক, তরুণাস্থি, টেন্ডন, লিগামেন্ট এবং রক্তনালীর স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে শরীরকে ফ্রি র‍্যাডিকেলের (free radicals) ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করা।
  • আয়রনের শোষণ বাড়িয়ে রক্তস্বল্পতা (anemia) প্রতিরোধে সহায়তা করা।

Associated Conditions

সোডিয়াম অ্যাসকরবেট সাধারণত ভিটামিন সি-এর অভাব সম্পর্কিত অবস্থার সাথে যুক্ত। এই অবস্থাগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • স্কার্ভি (Scurvy)
  • দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (Weakened Immune System)
  • ঘন ঘন সংক্রমণ (Frequent Infections)
  • রক্তস্বল্পতা (Anemia) - বিশেষ করে আয়রনের দুর্বল শোষণের কারণে
  • ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া (Delayed Wound Healing)
  • মাড়ির রোগ (Gum Disease)

বিরোধীতা এবং ব্ল্যাকবক্স সতর্কতা

সোডিয়াম অ্যাসকরবেটের জন্য কোনো ব্ল্যাকবক্স সতর্কতা নেই। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা উচিত নয়:

  • সোডিয়াম অ্যাসকরবেট বা এর কোনো উপাদানের প্রতি অতিসংবেদনশীলতা (hypersensitivity) থাকলে।
  • কিডনিতে পাথর (kidney stones) হওয়ার ইতিহাস থাকলে উচ্চ মাত্রায় সোডিয়াম অ্যাসকরবেট গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ এটি অক্সালেট পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  • গুরুতর কিডনি রোগে (severe kidney disease) আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে সোডিয়াম এবং অক্সালেটের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
  • গ্লুকোজ-৬-ফসফেট ডিহাইড্রোজিনেজ (G6PD) এর অভাবজনিত রোগীদের ক্ষেত্রে উচ্চ মাত্রায় ইন্ট্রাভেনাস (শিরাপথে) ভিটামিন সি হেমোলাইসিস (লোহিত রক্তকণিকা ভেঙে যাওয়া) ঘটাতে পারে।
  • সোডিয়াম-নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসে (sodium-restricted diet) থাকা ব্যক্তিদের সোডিয়াম গ্রহণের মাত্রা বিবেচনায় রাখতে হবে।

ফার্মাকোডাইনামিক্স

সোডিয়াম অ্যাসকরবেট শরীরে অ্যাসকরবিক অ্যাসিড হিসেবে কাজ করে। এটি একটি শক্তিশালী জল-দ্রবণীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি শরীরের তরল অংশে ফ্রি র‍্যাডিক্যালগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে কোষকে অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এটি ভিটামিন ই-এর মতো অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পুনরুৎপাদনেও সহায়তা করে। কোলাজেন সংশ্লেষণের জন্য এটি অপরিহার্য, যেখানে এটি প্রোলিন (proline) এবং লাইসিন (lysine) নামক অ্যামিনো অ্যাসিডের হাইড্রক্সিলেশন (hydroxylation) প্রক্রিয়ায় কো-ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও, এটি কার্নিটিন (carnitine) এবং নিউরোট্রান্সমিটার (neurotransmitters) সংশ্লেষণেও ভূমিকা রাখে।

কর্ম প্রক্রিয়া

সোডিয়াম অ্যাসকরবেটের কাজের মূল প্রক্রিয়াটি হলো এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং এনজাইম কো-ফ্যাক্টর হিসেবে ভূমিকা।

  1. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্রিয়া: এটি ইলেকট্রন দান করে প্রতিক্রিয়াশীল অক্সিজেন প্রজাতি (Reactive Oxygen Species - ROS) এবং প্রতিক্রিয়াশীল নাইট্রোজেন প্রজাতি (Reactive Nitrogen Species - RNS) যেমন সুপারঅক্সাইড (superoxide), হাইড্রক্সিল র‍্যাডিক্যাল (hydroxyl radical) এবং নাইট্রিক অক্সাইডকে (nitric oxide) নিষ্ক্রিয় করে। এই প্রক্রিয়ায় এটি কোষের ডিএনএ, প্রোটিন এবং লিপিডকে অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
  2. কোলাজেন সংশ্লেষণ: কোলাজেন হলো শরীরের প্রধান গাঠনিক প্রোটিন। এর উৎপাদনের জন্য প্রোলিল (prolyl) এবং লাইসিল (lysyl) হাইড্রক্সিলেজ নামক এনজাইমগুলোর সক্রিয়তা প্রয়োজন। অ্যাসকরবেট এই এনজাইমগুলোর জন্য একটি অপরিহার্য কো-ফ্যাক্টর, যা কোলাজেনের স্থিতিশীল ট্রিপল-হেলিক্স গঠন নিশ্চিত করে।
  3. আয়রন শোষণ: সোডিয়াম অ্যাসকরবেট অ-হিম (non-heme) আয়রনকে (যা উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাবার থেকে পাওয়া যায়) ফেরিক (Fe3+) অবস্থা থেকে ফেরাস (Fe2+) অবস্থায় রূপান্তরিত করে। ফেরাস অবস্থাটি অন্ত্রে সহজে শোষিত হয়।
  4. ইমিউন ফাংশন: এটি শ্বেত রক্তকণিকার (যেমন নিউট্রোফিল এবং লিম্ফোসাইট) কার্যকারিতা বাড়ায়, যা জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মাত্রা

সোডিয়াম অ্যাসকরবেটের মাত্রা বয়স, লিঙ্গ এবং শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে।

  • প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ: দৈনিক ৯০ মিলিগ্রাম।
  • প্রাপ্তবয়স্ক নারী: দৈনিক ৭৫ মিলিগ্রাম।
  • গর্ভবতী নারী: দৈনিক ৮৫ মিলিগ্রাম।
  • স্তন্যদানকারী মা: দৈনিক ১২০ মিলিগ্রাম।
  • ধূমপায়ী: অধূমপায়ীদের চেয়ে দৈনিক ৩৫ মিলিগ্রাম বেশি প্রয়োজন।

চিকিৎসার জন্য মাত্রা:

  • স্কার্ভি: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দৈনিক ৩০০ মিলিগ্রাম থেকে ১ গ্রাম পর্যন্ত, যা বিভক্ত মাত্রায় দেওয়া হয়।
  • সাধারণ সর্দি-কাশি: দৈনিক ১ থেকে ৩ গ্রাম পর্যন্ত বিভক্ত মাত্রায় গ্রহণ করলে উপসর্গের তীব্রতা এবং সময়কাল কমতে পারে।
  • ক্ষত নিরাময়: দৈনিক ৫০০ মিলিগ্রাম থেকে ১ গ্রাম পর্যন্ত।

সাধারণত, দৈনিক ২,০০০ মিলিগ্রাম (২ গ্রাম) পর্যন্ত গ্রহণ নিরাপদ বলে মনে করা হয়। এর বেশি মাত্রায় গ্রহণ করলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

সেবনবিধি

সোডিয়াম অ্যাসকরবেট সাধারণত পাউডার বা ট্যাবলেট আকারে মুখে গ্রহণ করা হয়।

  • পাউডার: পাউডার পানিতে বা ফলের রসে ভালোভাবে মিশিয়ে পান করা হয়। এটি খাবারের সাথে বা খালি পেটে গ্রহণ করা যায়। যাদের পেট সংবেদনশীল, তাদের জন্য খাবারের সাথে গ্রহণ করা ভালো।
  • ট্যাবলেট/ক্যাপসুল: এক গ্লাস পানির সাথে ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল গিলে ফেলতে হবে।
  • বিভক্ত মাত্রা: উচ্চ মাত্রা (১ গ্রামের বেশি) গ্রহণের ক্ষেত্রে, শোষণ বাড়ানোর জন্য এবং পেটের সমস্যা এড়ানোর জন্য এটিকে সারাদিনে ২-৩টি বিভক্ত মাত্রায় গ্রহণ করা ভালো। উদাহরণস্বরূপ, ১ গ্রাম সোডিয়াম অ্যাসকরবেট ৫০০ মিলিগ্রামের দুটি ডোজে ভাগ করে নেওয়া যেতে পারে।

কাজ করতে কত সময় লাগে?

মুখে সেবনের পর সোডিয়াম অ্যাসকরবেট দ্রুত শোষিত হয় এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রক্তরসে এর ঘনত্ব বাড়তে শুরু করে। তবে এর পরিপূর্ণ কার্যকারিতা, যেমন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি বা ক্ষত নিরাময়, নিয়মিত সেবনের উপর নির্ভর করে এবং এর প্রভাব প্রকাশ পেতে কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। তীব্র অভাবের ক্ষেত্রে, লক্ষণীয় উন্নতি কয়েক দিনের মধ্যেই দেখা যেতে পারে।

শোষণ

সোডিয়াম অ্যাসকরবেট প্রধানত ক্ষুদ্রান্ত্রের দূরবর্তী অংশে (distal small intestine) সোডিয়াম-নির্ভর ভিটামিন সি ট্রান্সপোর্টার (SVCT1) এর মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে শোষিত হয়। শোষণ প্রক্রিয়াটি স্যাচুরেবল, অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট মাত্রার পরে এর শোষণের হার কমে যায়। কম মাত্রায় (৩০-১৮০ মিলিগ্রাম/দিন) প্রায় ৭০-৯০% শোষিত হয়, কিন্তু মাত্রা বাড়ার সাথে সাথে (১ গ্রামের বেশি) শোষণের হার ৫০% এর নিচে নেমে আসে। অবশিষ্টাংশ বৃহদন্ত্রে চলে যায় এবং সেখানে分解 হয়।

বিতরণের পরিমাণ

ভিটামিন সি শরীরের সমস্ত কলায় ব্যাপকভাবে বিতরণ করা হয়, তবে এর ঘনত্ব বিভিন্ন কলায় ভিন্ন হয়। পিটুইটারি গ্রন্থি, অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি, মস্তিষ্ক, লিউকোসাইট এবং চোখে এর ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি থাকে। রক্তরস এবং লালায় এর ঘনত্ব তুলনামূলকভাবে কম থাকে। এর বিতরণের পরিমাণ (Volume of Distribution) প্রায় ০.৩৫ লিটার/কেজি।

প্রোটিন বাইন্ডিং

সোডিয়াম অ্যাসকরবেট (বা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড) রক্তরসের প্রোটিনের সাথে খুব কম পরিমাণে আবদ্ধ হয় (প্রায় ২৫%)। এর বেশিরভাগই প্লাজমায় মুক্ত অবস্থায় থাকে।

বিপাক

অ্যাসকরবিক অ্যাসিড লিভারে বিপাকিত হয়। এর প্রধান বিপাকীয় পথ হলো ডিহাইড্রোঅ্যাসকরবিক অ্যাসিডে (dehydroascorbic acid) অক্সিডেশন এবং পরবর্তীতে অপরিবর্তনীয়ভাবে ২,৩-ডাইকিটোগুলোনিক অ্যাসিড (2,3-diketogulonic acid) এবং অক্সালিক অ্যাসিডে (oxalic acid) হাইড্রোলাইসিস। শরীর যখন ভিটামিন সি দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে, তখন অতিরিক্ত অ্যাসকরবিক অ্যাসিড অপরিবর্তিত অবস্থায় প্রস্রাবের সাথে বেরিয়ে যায়।

অর্ধ জীবন

রক্তরসে অ্যাসকরবিক অ্যাসিডের অর্ধ-জীবন (half-life) ডোজ-নির্ভর। এটি সাধারণত ১০ থেকে ২০ দিনের মধ্যে থাকে। যখন শরীরের মজুদ কম থাকে, তখন অর্ধ-জীবন দীর্ঘ হয়, এবং যখন মজুদ বেশি থাকে, তখন এটি দ্রুত শরীর থেকে বেরিয়ে যায় এবং অর্ধ-জীবন সংক্ষিপ্ত হয়।

নির্মূল

সোডিয়াম অ্যাসকরবেটের বিপাকজাত পদার্থ এবং অতিরিক্ত অপরিবর্তিত অ্যাসকরবিক অ্যাসিড প্রধানত কিডনির মাধ্যমে প্রস্রাবের সাথে শরীর থেকে নিষ্কাশিত হয়। যখন দৈনিক গ্রহণ ১০০ মিলিগ্রামের কম থাকে, তখন খুব কম পরিমাণ অপরিবর্তিত অ্যাসকরবিক অ্যাসিড প্রস্রাবে পাওয়া যায়। কিন্তু উচ্চ মাত্রায় গ্রহণের ফলে অতিরিক্ত ভিটামিন সি শরীর থেকে দ্রুত বেরিয়ে যায়।

ঔষধের মিথক্রিয়া

সোডিয়াম অ্যাসকরবেট কিছু ঔষধের সাথে মিথস্ক্রিয়া করতে পারে:

  • অ্যালুমিনিয়ামযুক্ত অ্যান্টাসিড: ভিটামিন সি অ্যালুমিনিয়ামের শোষণ বাড়াতে পারে, যা কিডনি রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
  • কেমোথেরাপির ঔষধ: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে ভিটামিন সি কিছু কেমোথেরাপি ঔষধের কার্যকারিতা কমাতে পারে।
  • ইস্ট্রোজেন: ভিটামিন সি ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বাড়াতে পারে, যা এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বাড়াতে পারে।
  • প্রোটিয়াজ ইনহিবিটর (HIV/AIDS এর ঔষধ): উচ্চ মাত্রার ভিটামিন সি এই ঔষধগুলোর কার্যকারিতা কমাতে পারে।
  • ওয়ারফারিন (রক্ত পাতলা করার ঔষধ): উচ্চ মাত্রার ভিটামিন সি ওয়ারফারিনের কার্যকারিতা কমাতে পারে।
  • অ্যাসপিরিন: অ্যাসপিরিন ভিটামিন সি-এর নিষ্কাশন বাড়াতে পারে এবং ভিটামিন সি অ্যাসপিরিনের শোষণ বাড়াতে পারে।

রোগ মিথস্ক্রিয়া

কিছু রোগের ক্ষেত্রে সোডিয়াম অ্যাসকরবেট ব্যবহারে সতর্কতা প্রয়োজন:

  • কিডনিতে পাথর (Kidney Stones): উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন সি অক্সালেট পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়ায়।
  • হিমোক্রোমাটোসিস (Hemochromatosis): এটি একটি লৌহ সঞ্চয়জনিত রোগ। ভিটামিন সি আয়রনের শোষণ বাড়ায় বলে এই রোগীদের ক্ষেত্রে এটি আয়রনের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
  • গ্লুকোজ-৬-ফসফেট ডিহাইড্রোজিনেজ (G6PD) এর অভাব: এই রোগীদের উচ্চ মাত্রার ভিটামিন সি (বিশেষ করে ইন্ট্রাভেনাস) দিলে লোহিত রক্তকণিকা ভেঙে যাওয়ার (হেমোলাইসিস) ঝুঁকি থাকে।

খাদ্য মিথস্ক্রিয়া

সোডিয়াম অ্যাসকরবেটের সাথে নির্দিষ্ট কোনো খাবারের উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক মিথস্ক্রিয়া নেই। বরং, এটি উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাবার (যেমন, শাক-সবজি, ডাল) থেকে আয়রনের শোষণ বাড়াতে সাহায্য করে। তাই আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের সাথে ভিটামিন সি গ্রহণ উপকারী।

ব্যবহারের দিকনির্দেশনা

সর্বোত্তম ফলাফলের জন্য, সোডিয়াম অ্যাসকরবেট নিয়মিত গ্রহণ করা উচিত। পাউডার ফর্ম ব্যবহার করলে, এটি সম্পূর্ণরূপে পানিতে বা রসে দ্রবীভূত হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করুন। উচ্চ মাত্রার ক্ষেত্রে, পেটের অস্বস্তি এড়াতে ডোজটি সারাদিনে ভাগ করে নিন। শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী ডোজ সামঞ্জস্য করা যেতে পারে, তবে নির্ধারিত সর্বোচ্চ নিরাপদ মাত্রা অতিক্রম করা উচিত নয়।

প্রতিনির্দেশনা

নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে সোডিয়াম অ্যাসকরবেট প্রতিনির্দেশিত (contraindicated):

  • অ্যাসকরবিক অ্যাসিড বা সোডিয়াম অ্যাসকরবেটের প্রতি পরিচিত অ্যালার্জি বা অতিসংবেদনশীলতা।
  • হাইপারঅক্সালুরিয়া (Hyperoxaluria) বা প্রস্রাবে অতিরিক্ত অক্সালেট নিঃসরণ।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

সাধারণত সোডিয়াম অ্যাসকরবেট সুসহনীয়। তবে উচ্চ মাত্রায় (দৈনিক ২ গ্রামের বেশি) গ্রহণ করলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে:

  • ডায়রিয়া
  • বমি বমি ভাব
  • বমি
  • পেট ব্যথা বা মোচড়ানো
  • বুক জ্বালাপোড়া
  • মাথাব্যথা
  • অনিদ্রা

বিরূপ প্রভাব

গুরুতর বিরূপ প্রভাব বিরল, তবে উচ্চ মাত্রা দীর্ঘ সময় ধরে গ্রহণের ফলে হতে পারে:

  • কিডনিতে অক্সালেট পাথর তৈরি হওয়া।
  • গুরুতর হেমোলাইটিক অ্যানিমিয়া (G6PD অভাবযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে)।
  • শরীরে আয়রনের অতিরিক্ত সঞ্চয় (হিমোক্রোমাটোসিস রোগীদের মধ্যে)।
  • দাঁতের এনামেলের ক্ষয় (যদি চুষে খাওয়ার ট্যাবলেট হয়)।

গর্ভাবস্থায় ব্যবহার

গর্ভাবস্থায় ভিটামিন সি মা এবং ভ্রূণের বিকাশের জন্য অপরিহার্য। প্রস্তাবিত দৈনিক মাত্রা (৮৫ মিলিগ্রাম) গ্রহণ করা নিরাপদ এবং প্রয়োজনীয়। তবে, গর্ভাবস্থায় খুব উচ্চ মাত্রায় (দৈনিক কয়েক গ্রাম) ভিটামিন সি গ্রহণের বিষয়ে সীমিত গবেষণা রয়েছে এবং এটি নবজাতকের মধ্যে রিবাউন্ড স্কার্ভি (rebound scurvy) ঘটাতে পারে বলে কিছু উদ্বেগ রয়েছে। উচ্চ মাত্রা গ্রহণের প্রয়োজন হলে, তা বিভক্ত ডোজে গ্রহণ করা উচিত।

স্তন্যদানকালে ব্যবহার

স্তন্যদানকারী মায়েদের ভিটামিন সি-এর চাহিদা বৃদ্ধি পায় (দৈনিক প্রায় ১২০ মিলিগ্রাম)। মায়ের দুধের মাধ্যমে শিশু পর্যাপ্ত ভিটামিন সি পায়। সম্পূরক হিসেবে সোডিয়াম অ্যাসকরবেট গ্রহণ নিরাপদ। তবে, অতিরিক্ত উচ্চ মাত্রা এড়ানো উচিত, কারণ এটি দুধে ভিটামিন সি-এর ঘনত্ব বাড়িয়ে দিতে পারে এবং শিশুর উপর এর প্রভাব পুরোপুরি জানা নেই।

বিষাক্ততা

সোডিয়াম অ্যাসকরবেটের তীব্র বিষাক্ততা (acute toxicity) খুবই কম কারণ এটি জল-দ্রবণীয় এবং অতিরিক্ত পরিমাণ শরীর থেকে প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। তবে, দীর্ঘ সময় ধরে প্রতিদিন ২ গ্রামের বেশি গ্রহণ করলে দীর্ঘস্থায়ী বিষাক্ততার ঝুঁকি থাকে, যার প্রধান লক্ষণ হলো কিডনিতে অক্সালেট পাথর গঠন। G6PD অভাবযুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে উচ্চ মাত্রার শিরায় প্রয়োগ মারাত্মক হেমোলাইসিস ঘটাতে পারে।

সতর্কতা

নিম্নলিখিত বিষয়গুলির উপর মনোযোগ দেওয়া উচিত:

  • সোডিয়াম গ্রহণ: উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগের রোগীদের সোডিয়াম অ্যাসকরবেট থেকে প্রাপ্ত সোডিয়ামের পরিমাণ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। প্রতি ১,০০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম অ্যাসকরবেটে প্রায় ১১১ মিলিগ্রাম সোডিয়াম থাকে।
  • ল্যাবরেটরি পরীক্ষা: উচ্চ মাত্রার ভিটামিন সি প্রস্রাবের গ্লুকোজ, ক্রিয়েটিনিন এবং ইউরিক অ্যাসিড পরীক্ষার ফলাফলে হস্তক্ষেপ করতে পারে এবং মলে গুপ্ত রক্ত (occult blood) পরীক্ষার ভুল ফলাফল দিতে পারে। এই ধরনের পরীক্ষার আগে ভিটামিন সি গ্রহণ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা প্রয়োজন।
  • ডায়াবেটিস: ডায়াবেটিস রোগীদের উচ্চ মাত্রার ভিটামিন সি গ্রহণ করার সময় রক্তের গ্লুকোজ নিরীক্ষণ করা উচিত, কারণ এটি গ্লুকোজের বিপাককে প্রভাবিত করতে পারে।

মাত্রাধিক্যতা

সোডিয়াম অ্যাসকরবেটের মাত্রাধিক্যতা সাধারণত বিপজ্জনক নয়, তবে এটি অস্বস্তিকর উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে। লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • তীব্র ডায়রিয়া
  • পেটে মারাত্মক ব্যথা এবং গ্যাস
  • কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি
  • অসমোটিক ডায়রিয়া (Osmotic diarrhea)

মাত্রাধিক্যতার ক্ষেত্রে, সম্পূরক গ্রহণ বন্ধ করতে হবে এবং প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে যাতে অতিরিক্ত ভিটামিন সি শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। লক্ষণগুলি গুরুতর হলে চিকিৎসকের সহায়তা নেওয়া উচিত।

বিপরীত

সোডিয়াম অ্যাসকরবেটের কোনো নির্দিষ্ট বিপরীত (antidote) নেই। এর প্রভাব কমানোর প্রধান উপায় হলো এর গ্রহণ বন্ধ করা এবং শরীরকে স্বাভাবিকভাবে এটি নিষ্কাশন করতে দেওয়া।

সংরক্ষণ

সোডিয়াম অ্যাসকরবেট সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন যাতে এর কার্যকারিতা বজায় থাকে:

  • শুষ্ক এবং শীতল স্থানে সংরক্ষণ করুন (সাধারণত ২৫°সেলসিয়াস বা ৭৭°ফারেনহাইটের নিচে)।
  • আলো, তাপ এবং আর্দ্রতা থেকে দূরে রাখুন, কারণ এগুলি ভিটামিন সি-কে নষ্ট করে দেয়।
  • শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন।
  • বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করা উচিত, কারণ অক্সিজেন এর কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে।

ব্যবহার

সাধারণ সর্দি, কাশি, জ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জা দ্বারা সৃষ্ট ফ্লু, কর্কশতা, ব্যাথা, গলা জ্বালা, এয়ারওয়ে সিক্রেশন ক্লিয়ারেন্স থেরাপি, পুষ্টি সম্পূরক, ভিটামিন সম্পূরক

Cevitol এর দাম কত? Cevitol এর দাম

Cevitol in Bangla
Cevitol in bangla
বাণিজ্যিক নাম Cevitol
জেনেরিক Sodium ascorbate
ধরণ
পরিমাপ
দাম
চিকিৎসাগত শ্রেণি
উৎপাদনকারী
উপলভ্য দেশ Austria
সর্বশেষ সম্পাদনা January 7, 2025 at 1:49 am

খাওয়ার নিয়ম / ব্যবহারের নিয়ম

Cevitol খাওয়ার নিয়ম / ব্যবহারের নিয়ম

আরো বিস্তারিত দেখুন Cevitol

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

সতর্কতা

মিথস্ক্রিয়া

গর্ভাবস্থাকালীন ব্যবহার

বৈপরীত্য

অতিরিক্ত সতর্কতা

তীব্র ওভারডোজ

অন্যান্য ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া

সংরক্ষণ

*** Taking medicines without doctor's advice can cause long-term problems.
Share