ডেক্সাকুয়া ডিএস

সারসংক্ষেপ

ডেক্সট্রোজ (ডেক্সাকুয়া ডিএস) হলো ডি-গ্লুকোজের রাসায়নিক নাম, যা একটি সরল শর্করা (simple sugar) এবং মানবদেহের জন্য শক্তির একটি মৌলিক উৎস। চিকিৎসাগতভাবে, এটি বিভিন্ন রূপে ব্যবহৃত হয়, যেমন শিরায় দেওয়ার তরল (intravenous fluid), মুখে খাওয়ার জেল বা ট্যাবলেট। এটি প্রধানত হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়া), ডিহাইড্রেশন (পানিশূন্যতা) এবং পুষ্টির ঘাটতি পূরণের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি দ্রুত শরীরে শক্তি সরবরাহ করে এবং রক্তের শর্করার মাত্রা বাড়ায়।

ব্যাকগ্রাউন্ড

ডেক্সট্রোজ প্রাকৃতিকভাবে ভুট্টা বা অন্যান্য শস্য থেকে তৈরি করা হয় এবং এটি রাসায়নিকভাবে গ্লুকোজের অনুরূপ, যা আমাদের রক্তে শক্তির প্রধান উৎস। ১৯ শতক থেকেই চিকিৎসাক্ষেত্রে এর ব্যবহার শুরু হয়, বিশেষ করে শিরায় তরল এবং শক্তি সরবরাহের একটি মাধ্যম হিসেবে। এর দ্রবণীয়তা এবং শরীর দ্বারা দ্রুত বিপাকিত হওয়ার ক্ষমতার কারণে এটি চিকিৎসা জগতে একটি অপরিহার্য উপাদান।

ইঙ্গিত

ডেক্সট্রোজ নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য নির্দেশিত:

  • হাইপোগ্লাইসেমিয়া (Hypoglycemia): ডায়াবেটিস রোগীদের বা অন্য কোনো কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ কমে গেলে তা দ্রুত স্বাভাবিক করতে।
  • ডিহাইড্রেশন (Dehydration): শরীর থেকে পানি কমে গেলে তা পূরণ করতে, প্রায়শই ইলেক্ট্রোলাইটের সাথে একত্রে দেওয়া হয়।
  • পুষ্টির সহায়তা (Nutritional Support): যেসব রোগী মুখ দিয়ে খেতে পারেন না, তাদের জন্য প্যারেন্টেরাল নিউট্রিশন (শিরায় পুষ্টি) এর একটি অংশ হিসেবে ক্যালোরি সরবরাহ করতে।
  • ঔষধের বাহক (Vehicle for Medications): কিছু ঔষধ শিরায় দেওয়ার জন্য ডেক্সট্রোজ দ্রবণের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা হয়।

Associated Conditions

এটি ডায়াবেটিস (হাইপোগ্লাইসেমিয়ার চিকিৎসায়), গুরুতর অসুস্থতা বা সার্জারির পর পুষ্টির ঘাটতি, এবং হিট স্ট্রোক বা তীব্র ডায়রিয়ার কারণে সৃষ্ট পানিশূন্যতার মতো অবস্থায় ব্যবহৃত হয়।

বিরোধীতা এবং ব্ল্যাকবক্স সতর্কতা

যাদের রক্তে শর্করার মাত্রা অত্যন্ত বেশি (হাইপারগ্লাইসেমিয়া), ডায়াবেটিক কোমা, গুরুতর পানিশূন্যতা (যেখানে ইলেক্ট্রোলাইট দেওয়া হয়নি), ইন্ট্রাক্রেনিয়াল হেমোরেজ (মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ) বা ভুট্টার প্রতি অ্যালার্জি আছে, তাদের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা যাবে না। এর কোনো নির্দিষ্ট ব্ল্যাকবক্স সতর্কতা নেই।

ফার্মাকোডাইনামিক্স

ডেক্সট্রোজ শরীরে প্রবেশ করার পর সরাসরি কোষীয় শ্বসনে (cellular respiration) অংশ নেয়। এটি গ্লাইকোলাইসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাইরুভেটে রূপান্তরিত হয় এবং পরে ক্রেবস চক্রের মাধ্যমে অ্যাডিনোসিন ট্রাইফসফেট (ATP) বা শক্তি তৈরি করে। এই শক্তি শরীরের প্রায় সমস্ত জৈবিক ক্রিয়াকলাপের জন্য অপরিহার্য।

কর্ম প্রক্রিয়া

শিরায় প্রয়োগ করার পর, ডেক্সট্রোজ দ্রুত রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে এবং রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এটি শরীরের কোষগুলোতে শোষিত হয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে শক্তি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ক্ষেত্রে, এটি মস্তিষ্কের জন্য প্রয়োজনীয় গ্লুকোজ সরবরাহ করে এবং দ্রুত চেতনা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। ডিহাইড্রেশনের ক্ষেত্রে, এটি শরীরকে পানি এবং কিছু ক্যালোরি সরবরাহ করে।

মাত্রা

ডেক্সট্রোজের মাত্রা এবং ঘনত্ব রোগীর প্রয়োজন, বয়স এবং অবস্থার উপর নির্ভর করে।

  • শিরায় তরল হিসেবে: সাধারণত ৫% (D5W), ১০% (D10W), বা ৫০% (D50W) ঘনত্বের দ্রবণ ব্যবহৃত হয়। প্রয়োগের হার চিকিৎসক দ্বারা নির্ধারিত হয়।
  • হাইপোগ্লাইসেমিয়ার জন্য: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাধারণত ১৫-২০ গ্রাম ডেক্সট্রোজ মুখে বা শিরায় দেওয়া হয়।

সেবনবিধি

শিরাপথে (Intravenous - IV) প্রয়োগ: এটি সাধারণত হাসপাতাল বা ক্লিনিকের পরিবেশে একজন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী দ্বারা শিরায় ধীর গতিতে ইনফিউশন হিসেবে দেওয়া হয়। ইনফিউশনের হার এবং সময়কাল রোগীর অবস্থা অনুযায়ী কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
মুখে গ্রহণ (Oral): হাইপোগ্লাইসেমিয়ার চিকিৎসার জন্য, ডেক্সট্রোজ জেল বা চুষে খাওয়ার ট্যাবলেট পাওয়া যায়। ট্যাবলেটটি সম্পূর্ণ চুষে বা চিবিয়ে খেতে হবে। জেলটি সাধারণত গালের ভিতরে বা জিহ্বার নিচে প্রয়োগ করা হয় যাতে এটি দ্রুত শোষিত হয়।

কাজ করতে কত সময় লাগে?

শিরায় প্রয়োগ করার পর এর প্রভাব প্রায় তাৎক্ষণিক। মুখে খাওয়ার পর রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে সাধারণত ৫ থেকে ১৫ মিনিট সময় লাগে।

শোষণ

শিরায় দিলে এর বায়োঅ্যাভেইলেবিলিটি ১০০%। মুখ দিয়ে গ্রহণ করলে এটি পরিপাকতন্ত্র থেকে দ্রুত শোষিত হয়।

বিতরণের পরিমাণ

এটি শরীরের মোট পানির পরিমাণে বিতরণ হয় এবং কোষের ভিতরে ও বাইরে ছড়িয়ে পড়ে।

প্রোটিন বাইন্ডিং

এটি একটি সরল শর্করা হওয়ায় প্লাজমা প্রোটিনের সাথে আবদ্ধ হয় না।

বিপাক

ডেক্সট্রোজ শরীরের সমস্ত কোষে গ্লাইকোলাইসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিপাকিত হয়ে শক্তি, কার্বন ডাই অক্সাইড এবং পানিতে পরিণত হয়।

অর্ধ জীবন

এর কোনো নির্দিষ্ট ফার্মাকোলজিক্যাল অর্ধ-জীবন নেই, কারণ এটি শরীর দ্বারা প্রয়োজন অনুযায়ী দ্রুত বিপাকিত হয়।

নির্মূল

এর বিপাকের চূড়ান্ত উৎপাদ—কার্বন ডাই অক্সাইড—শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে এবং পানি কিডনির মাধ্যমে প্রস্রাবের সাথে নির্গত হয়।

ঔষধের মিথস্ক্রিয়া

এর সাথে সরাসরি তেমন কোনো ঔষধের মিথস্ক্রিয়া নেই। তবে, এটি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, তাই ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ইনসুলিন বা অন্যান্য ঔষধের মাত্রার সমন্বয় করার প্রয়োজন হতে পারে।

রোগ মিথস্ক্রিয়া

ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এটি হাইপারগ্লাইসেমিয়া ঘটাতে পারে। হৃদরোগ বা কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত তরল প্রদানের কারণে ফ্লুইড ওভারলোড বা ফুসফুসে পানি জমার (pulmonary edema) ঝুঁকি থাকে।

খাদ্য মিথস্ক্রিয়া

এর কোনো উল্লেখযোগ্য খাদ্য মিথস্ক্রিয়া নেই।

ব্যবহারের দিকনির্দেশনা

আপনার যদি ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনির সমস্যা বা ভুট্টার প্রতি অ্যালার্জি থাকে, তবে চিকিৎসা শুরুর আগে অবশ্যই চিকিৎসককে জানান। শিরায় ইনফিউশন চলাকালীন ইনজেকশনের স্থানে কোনো ব্যথা, ফোলা বা লালচে ভাব দেখা দিলে অবিলম্বে নার্স বা চিকিৎসককে অবহিত করুন। ডায়াবেটিস থাকলে, চিকিৎসা চলাকালীন আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন।

প্রতিনির্দেশনা

গুরুতর হাইপারগ্লাইসেমিয়া, ডায়াবেটিক কোমা (ইনসুলিন ছাড়া), ইন্ট্রাক্রেনিয়াল বা ইন্ট্রাস্পাইনাল হেমোরেজ এবং ডিহাইড্রেটেড ডিলিরিয়াম ট্রেমেন্স রোগীদের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা যাবে না।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

শিরায় প্রয়োগের স্থানে ব্যথা, জ্বালা বা ফোলা (ফ্লেবাইটিস) হতে পারে। দ্রুত ইনফিউশন দিলে হাইপারগ্লাইসেমিয়া, গ্লাইকোসুরিয়া (প্রস্রাবে গ্লুকোজ) এবং ফ্লুইড ওভারলোড হতে পারে।

বিরূপ প্রভাব

গুরুতর বিরূপ প্রভাবের মধ্যে রয়েছে হাইপারঅসমোলার হাইপারগ্লাইসেমিক স্টেট (HHS), তীব্র ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা এবং অতিরিক্ত তরলের কারণে হার্ট ফেইলিওর।

গর্ভাবস্থায় ব্যবহার

গর্ভাবস্থায় চিকিৎসাগত প্রয়োজনে (যেমন: ডিহাইড্রেশন) এটি ব্যবহার করা নিরাপদ। তবে, মায়ের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি, কারণ হাইপারগ্লাইসেমিয়া ভ্রূণের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

স্তন্যদানকালে ব্যবহার

স্তন্যদানকালে এটি ব্যবহার করা নিরাপদ বলে মনে করা হয়।

বিষাক্ততা

এর বিষাক্ততা মূলত অতিরিক্ত মাত্রার কারণে সৃষ্ট হাইপারগ্লাইসেমিয়া এবং তরল ও ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতার সাথে সম্পর্কিত।

সতর্কতা

শিরায় প্রয়োগের সময় তরলের ভারসাম্য, ইলেক্ট্রোলাইটের মাত্রা এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা আবশ্যক।

মাত্রাধিক্যতা

মাত্রাধিক্যতার ফলে হাইপারগ্লাইসেমিয়া, ফ্লুইড ওভারলোড এবং ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়।

বিপরীত

এর কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষেধক নেই। চিকিৎসা সহায়ক ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল, যেমন ডেক্সট্রোজ প্রদান বন্ধ করা, প্রয়োজনে ইনসুলিন দেওয়া এবং ইলেক্ট্রোলাইট সংশোধন করা।

সংরক্ষণ

এটি ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায়, চরম তাপ ও ঠান্ডা থেকে দূরে রাখুন। ব্যবহারের আগে দ্রবণটি স্বচ্ছ আছে কিনা এবং প্যাকেজে কোনো ফুটো আছে কিনা তা পরীক্ষা করে নিন।

ব্যবহার

অ্যারিথমিয়া, ক্যালরির ঘাটতি, সেরিব্রাম এর শোথ, বিপাকীয় অ্যালকালোসিস, হাইপোগ্লাইসেমিক প্রতিক্রিয়া, রক্তের নমুনা সংগ্রহ, ইলেক্ট্রোলাইট প্রতিস্থাপন, পুষ্টি সম্পূরক, পিতামাতার পুষ্টি, প্যারেন্টেরাল রিহাইড্রেশন থেরাপি, প্লাজমাফেরেসিস, ইতিবাচক কার্ডিয়াক ইনোট্রপিক প্রভাব, মোট প্যারেন্টেরাল নিউট্রিশন থেরাপি, প্রস্রাব ক্ষারীয়করণ থেরাপি, তরল এবং ইলেক্ট্রোলাইট রক্ষণাবেক্ষণ থেরাপি

ডেক্সাকুয়া ডিএস এর দাম কত? ডেক্সাকুয়া ডিএস এর দাম

ডেক্সাকুয়া ডিএস ডেক্সাকুয়া ডিএস in Bangla
Dexaqua DS in bangla
বাণিজ্যিক নাম ডেক্সাকুয়া ডিএস
জেনেরিক Dextrose
ধরণ আইভি ইনফিউশন
পরিমাপ 10% w/v
দাম
চিকিৎসাগত শ্রেণি
উৎপাদনকারী Beximco Pharmaceuticals Ltd
উপলভ্য দেশ Bangladesh
সর্বশেষ সম্পাদনা January 7, 2025 at 1:49 am

খাওয়ার নিয়ম / ব্যবহারের নিয়ম

ডেক্সাকুয়া ডিএস খাওয়ার নিয়ম / ব্যবহারের নিয়ম

আরো বিস্তারিত দেখুন ডেক্সাকুয়া ডিএস

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

সতর্কতা

মিথস্ক্রিয়া

গর্ভাবস্থাকালীন ব্যবহার

বৈপরীত্য

অতিরিক্ত সতর্কতা

তীব্র ওভারডোজ

অন্যান্য ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া

সংরক্ষণ

*** Taking medicines without doctor's advice can cause long-term problems.
Share