Dgf Gentamicin Skin

নির্দেশনা

জেন্টামাইসিন একটি অ্যামিনোগ্লাইকোসাইড অ্যান্টিবায়োটিক যা বিভিন্ন ধরণের গুরুতর ব্যাকটেরিয়া ঘটিত সংক্রমণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে রয়েছে হাড়ের সংক্রমণ, এন্ডোকার্ডাইটিস (হৃদপিণ্ডের অভ্যন্তরীণ আবরণের প্রদাহ), পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ, মেনিনজাইটিস, নিউমোনিয়া, মূত্রনালীর সংক্রমণ এবং সেপসিস (রক্তের সংক্রমণ)। এটি সাধারণত সিউডোমোনাস অ্যারুজিনোসা, প্রোটিয়াস এসপি, এসচেরিচিয়া কোলাই, ক্লেবসিয়েলা, এন্টারোব্যাক্টর, সেরাটিয়া এবং স্ট্যাফাইলোকক্কাসের মতো সংবেদনশীল জীবাণুর বিরুদ্ধে কার্যকর। চোখের ড্রপ হিসেবে এটি চোখের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ যেমন কনজাংটিভাইটিস এবং ব্লেফারাইটিসের জন্য ব্যবহৃত হয়।

ফার্মাকোলজি

জেন্টামাইসিন একটি ব্যাকটেরিয়া-নাশক (bactericidal) অ্যান্টিবায়োটিক। এটি ব্যাকটেরিয়ার রাইবোসোমের 30S সাবইউনিটের সাথে আবদ্ধ হয়ে প্রোটিন সংশ্লেষণে বাধা সৃষ্টি করে। এর ফলে ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীর ত্রুটিপূর্ণভাবে গঠিত হয় এবং ব্যাকটেরিয়া মারা যায়। এটি গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে বিশেষভাবে কার্যকর।

মাত্রা

জেন্টামাইসিনের মাত্রা রোগীর বয়স, ওজন, সংক্রমণের তীব্রতা এবং কিডনির কার্যকারিতার উপর নির্ভর করে নির্ধারণ করা হয়। এটি সাধারণত ইনজেকশন হিসেবে শিরায় (intravenous) বা মাংসপেশীতে (intramuscular) দেওয়া হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে, সাধারণ ডোজ ৩-৫ মি.গ্রা./কেজি/দিন, যা প্রতি ৮ ঘন্টা অন্তর তিনটি বিভক্ত ডোজে ৭ থেকে ১০ দিনের জন্য দেওয়া হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে এবং কিডনির সমস্যা থাকলে মাত্রা সামঞ্জস্য করার প্রয়োজন হয়।

সেবনবিধি

জেন্টামাইসিন ইনজেকশন শুধুমাত্র নিবন্ধিত চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর তত্ত্বাবধানে গ্রহণ করা উচিত। শিরায় প্রয়োগের ক্ষেত্রে, স্যালাইনের সাথে মিশিয়ে ধীরে ধীরে (৩০ মিনিট থেকে ২ ঘন্টার মধ্যে) ইনফিউশন করা হয়। মাংসপেশীতে ইনজেকশন গভীর মাংসপেশীতে প্রয়োগ করা হয়। চোখের ড্রপ ব্যবহারের আগে ও পরে হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।

কিভাবে কাজ করে

জেন্টামাইসিন ব্যাকটেরিয়ার কোষে প্রবেশ করে এর রাইবোসোমের 30S সাবইউনিটের সাথে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ হয়। এই আবদ্ধতার ফলে mRNA (messenger RNA) এর কোডন ভুলভাবে পঠিত হয়, যার কারণে ব্যাকটেরিয়া ভুল অ্যামিনো অ্যাসিড যুক্ত করে ত্রুটিপূর্ণ প্রোটিন তৈরি করে। এই অস্বাভাবিক প্রোটিনগুলো ব্যাকটেরিয়ার কোষের ঝিল্লিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং এর ফলে প্রয়োজনীয় কোষীয় উপাদান বাইরে বেরিয়ে আসে, যা শেষ পর্যন্ত ব্যাকটেরিয়ার মৃত্যু ঘটায়।

কাজ করতে কত সময় লাগে?

ইনজেকশন দেওয়ার পরে এটি দ্রুত কাজ শুরু করে। মাংসপেশীতে ইনজেকশন দেওয়ার ৩০-৬০ মিনিটের মধ্যে এবং শিরায় ইনজেকশন দেওয়ার প্রায় ৩০ মিনিটের মধ্যে রক্তে এর সর্বোচ্চ ঘনত্বে পৌঁছায়। তবে সংক্রমণের সম্পূর্ণ নিরাময়ের জন্য চিকিৎসার পুরো কোর্স সম্পন্ন করা আবশ্যক।

শোষণ

মুখে খেলে জেন্টামাইসিন পরিপাকতন্ত্র থেকে প্রায় শোষিত হয় না। একারণে, সিস্টেমিক সংক্রমণের জন্য এটি অবশ্যই ইনজেকশন (শিরা বা মাংসপেশী) দ্বারা প্রয়োগ করতে হয়। টপিক্যাল (যেমন ক্রিম বা মলম) এবং চোখের ড্রপ হিসেবে প্রয়োগ করলে এটি স্থানীয়ভাবে শোষিত হয়।

ঔষধের মিথক্রিয়া

জেন্টামাইসিন অন্যান্য কিছু ঔষধের সাথে মিথস্ক্রিয়া করতে পারে, যা এর কার্যকারিতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। যেমন: অন্যান্য অ্যামিনোগ্লাইকোসাইড, লুপ ডাইইউরেটিকস (যেমন ফুরোসেমাইড), এবং অন্যান্য নেফ্রোটক্সিক ঔষধ (যেমন অ্যামফোটেরিসিন বি, সিসপ্ল্যাটিন) এর সাথে ব্যবহারে কিডনি ও কানের ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ে।

রোগ মিথস্ক্রিয়া

কিছু নির্দিষ্ট রোগের ক্ষেত্রে জেন্টামাইসিন ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এর মাত্রা কমানোর প্রয়োজন হতে পারে। মায়াসথেনিয়া গ্রাভিস এবং পারকিনসন্স ডিজিজের মতো স্নায়বিক রোগে মাংসপেশীর দুর্বলতা বাড়িয়ে তুলতে পারে।

খাদ্য মিথস্ক্রিয়া

জেন্টামাইসিনের সাথে নির্দিষ্ট কোনো খাবারের মিথস্ক্রিয়ার বিশেষ কোনো প্রমাণ নেই কারণ এটি ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হয়। তবে চিকিৎসার সময় পর্যাপ্ত জল পান করা উচিত যাতে কিডনি সঠিকভাবে কাজ করতে পারে এবং ডিহাইড্রেশন এড়ানো যায়।

ব্যবহারের দিকনির্দেশনা

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক মাত্রায় এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ঔষধ ব্যবহার করা উচিত। কোনো ডোজ বাদ দেওয়া উচিত নয় এবং ভালো বোধ করলেও কোর্সের মাঝপথে ঔষধ বন্ধ করা উচিত নয়। চোখের ড্রপ ব্যবহারের সময় ড্রপারের ডগা যাতে চোখ বা অন্য কোনো পৃষ্ঠকে স্পর্শ না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

প্রতিনির্দেশনা

যাদের জেন্টামাইসিন বা অন্য কোনো অ্যামিনোগ্লাইকোসাইড অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি অ্যালার্জি বা অতিসংবেদনশীলতা আছে, তাদের ক্ষেত্রে এটি প্রতিনির্দেশিত (contraindicated)।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

জেন্টামাইসিনের কিছু গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। প্রধান পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো হলো নেফ্রোটক্সিসিটি (কিডনির ক্ষতি) এবং ওটোটক্সিসিটি (কানের ক্ষতি)। ওটোটক্সিসিটির ফলে ভার্টিগো (মাথা ঘোরা), টিনিটাস (কানে শোঁ শোঁ শব্দ) এবং শ্রবণশক্তি হ্রাস পেতে পারে, যা স্থায়ীও হতে পারে। অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে র‍্যাশ, চুলকানি, জ্বর, এবং মাথাব্যথা।

গর্ভাবস্থায় ব্যবহার

গর্ভাবস্থায় জেন্টামাইসিন ব্যবহার করা উচিত নয় যদি না এর উপকারিতা ভ্রূণের ঝুঁকির চেয়ে অনেক বেশি হয়। এটি প্লাসেন্টা অতিক্রম করতে পারে এবং উন্নয়নশীল ভ্রূণের কিডনি ও কানের ক্ষতি করতে পারে। এটি US FDA প্রেগন্যান্সি ক্যাটাগরি 'D' এর অন্তর্ভুক্ত।

স্তন্যদানকালে ব্যবহার

জেন্টামাইসিন অল্প পরিমাণে মায়ের দুধে নিঃসৃত হয়। যেহেতু এটি মুখ দিয়ে খেলে শোষিত হয় না, তাই শিশুর উপর এর প্রভাব কম হওয়ার সম্ভাবনা। তবে স্তন্যদানকালে ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

বিষাক্ততা

জেন্টামাইসিনের প্রধান বিষাক্ততা হলো নেফ্রোটক্সিসিটি এবং ওটোটক্সিসিটি। রক্তে ঔষধের মাত্রা বেশি হলে বা দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করলে এই ঝুঁকি বাড়ে। বয়স্ক রোগী এবং যাদের আগে থেকেই কিডনির সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে বিষাক্ততার ঝুঁকি বেশি।

সতর্কতা

চিকিৎসার সময় রক্তে জেন্টামাইসিনের মাত্রা এবং কিডনির কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি। ডিহাইড্রেশন বা জলশূন্যতা এড়াতে পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল গ্রহণ করতে হবে। যদি মাথা ঘোরা, কানে শব্দ বা শোনার সমস্যা দেখা দেয়, তবে অবিলম্বে চিকিৎসককে জানাতে হবে।

মাত্রাধিক্যতা

জেন্টামাইসিনের মাত্রাধিক্যতা (Overdose) কিডনি এবং কানের স্থায়ী ক্ষতির কারণ হতে পারে। লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রস্রাব কমে যাওয়া, শোনার সমস্যা, ভারসাম্যহীনতা এবং মাংসপেশীর দুর্বলতা। মাত্রাধিক্যতার ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন।

বিপরীত

জেন্টামাইসিনের কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিডোট বা বিপরীত ঔষধ নেই। মাত্রাধিক্যতার ক্ষেত্রে সহায়ক চিকিৎসা প্রদান করা হয়। হেমোডায়ালাইসিস বা পেরিটোনিয়াল ডায়ালাইসিস এর মাধ্যমে রক্ত থেকে অতিরিক্ত ঔষধ অপসারণ করা যেতে পারে।

সংরক্ষণ

জেন্টামাইসিন ইনজেকশন এবং চোখের ড্রপ আলো ও আর্দ্রতা থেকে দূরে, ৩০° সেলসিয়াস তাপমাত্রার নিচে সংরক্ষণ করা উচিত। শিশুদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে।

বিস্তারের আয়তন

জেন্টামাইসিনের বিস্তারের আয়তন (Volume of Distribution) তুলনামূলকভাবে কম, প্রায় ০.২৫ লিটার/কেজি। এটি মূলত এক্সট্রাসেলুলার ফ্লুইডে (extracellular fluid) বিস্তৃত হয় এবং টিস্যুতে এর প্রবেশ সীমিত।

অর্ধ জীবন

স্বাভাবিক কিডনি কার্যকারিতা সম্পন্ন প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে জেন্টামাইসিনের অর্ধ জীবন (Half-life) প্রায় ২-৩ ঘন্টা। এর অর্থ হলো, এই সময়ের মধ্যে শরীরের মোট জেন্টামাইসিনের অর্ধেক পরিমাণ নিষ্কাশিত হয়ে যায়।

নির্মূল

জেন্টামাইসিন শরীর থেকে প্রায় অপরিবর্তিত অবস্থায় নিষ্কাশিত হয়। এটি মেটাবলাইজড বা রাসায়নিকভাবে পরিবর্তিত হয় না।

নির্মূলের পথ

জেন্টামাইসিন প্রধানত কিডনির মাধ্যমে গ্লোমেরুলার ফিলট্রেশন (glomerular filtration) প্রক্রিয়ায় প্রস্রাবের সাথে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। কিডনির কার্যকারিতা কমে গেলে এর নির্মূল প্রক্রিয়াও ধীর হয়ে যায়, ফলে রক্তে এর মাত্রা বেড়ে গিয়ে বিষাক্ততার ঝুঁকি বাড়ে।

জেন্টামাইসিন হল অ্যামিনোগ্লাইকোসাইডগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং গুরুতর সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি ব্যাকটেরিয়াঘটিত এবং কিছু গ্রাম-পজিটিভ এবং অনেক গ্রাম-নেতিবাচক জীবের বিরুদ্ধে সক্রিয়। এটি Pseudomonas aeruginosa, Proteus sp এর বিরুদ্ধে সক্রিয়। E. coli, Klebsiella-Enterobacter-Serratia sp. সাইট্রোব্যাক্টর এসপি। এবং Staphylococcus sp. জেন্টামাইসিন 30S এবং 50S রাইবোসোমাল সাবুনিটের সাথে আবদ্ধ হয়ে ব্যাকটেরিয়া প্রোটিন সংশ্লেষণে হস্তক্ষেপ করে যার ফলে ব্যাকটেরিয়া কোষের ঝিল্লি ত্রুটিপূর্ণ হয়।