ডকোফার

সারসংক্ষেপ

স্পাইরোনোল্যাকটোন (ডকোফার) একটি পটাসিয়াম-স্পেয়ারিং ডাইইউরেটিক (মূত্রবর্ধক) যা অ্যালডোস্টেরন নামক হরমোনের কার্যকারিতা বাধা দেয়। এটি প্রধানত হার্ট ফেইলিওর, উচ্চ রক্তচাপ এবং ইডিমা (শরীরে পানি জমা) এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এছাড়া, এটি হরমোনজনিত সমস্যা যেমন নারীদের অতিরিক্ত চুল (হিরসুটিজম), ব্রণের চিকিৎসা এবং প্রাথমিক হাইপারঅ্যালডোস্টেরনিজম নির্ণয় ও চিকিৎসায় কার্যকর। এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত লবণ ও পানি বের করে দেয় কিন্তু পটাসিয়াম ধরে রাখে।

ব্যাকগ্রাউন্ড

স্পাইরোনোল্যাকটোন ১৯৫০-এর দশকে আবিষ্কৃত হয় এবং ১৯৫৯ সাল থেকে চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি প্রথম অ্যালডোস্টেরন অ্যান্টাগনিস্ট হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এর পটাসিয়াম ধরে রাখার অনন্য ক্ষমতার কারণে এটি অন্যান্য ডাইইউরেটিক থেকে ভিন্ন এবং হার্ট ফেইলিওরের চিকিৎসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

ইঙ্গিত

স্পাইরোনোল্যাকটোন নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য নির্দেশিত:

  • হার্ট ফেইলিওর (Heart Failure): গুরুতর হার্ট ফেইলিওরের রোগীদের মধ্যে মৃত্যুহার কমাতে।
  • ইডিমা (Edema): হার্ট ফেইলিওর, লিভার সিরোসিস বা নেফ্রোটিক সিনড্রোমের কারণে শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত পানি বের করতে।
  • উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension): অন্যান্য ঔষধে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত না হলে সহায়ক চিকিৎসা হিসেবে।
  • প্রাথমিক হাইপারঅ্যালডোস্টেরনিজম: এই অবস্থার নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্য।
  • হিরসুটিজম এবং ব্রণ: নারীদের মধ্যে অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের আধিক্যের কারণে সৃষ্ট অতিরিক্ত চুল এবং ব্রণের চিকিৎসায়।

Associated Conditions

এটি পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS) এর সাথে সম্পর্কিত হরমোনজনিত সমস্যার চিকিৎসায় এবং অ্যাসাইটিস (পেটে পানি জমা) নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত হয়।

বিরোধীতা এবং ব্ল্যাকবক্স সতর্কতা

যাদের হাইপারক্যালেমিয়া (রক্তে পটাসিয়ামের উচ্চ মাত্রা), অ্যাডিসন ডিজিজ, বা গুরুতর কিডনির সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা যাবে না।
ব্ল্যাকবক্স সতর্কতা (অফিসিয়াল নয়, তবে গুরুত্বপূর্ণ): প্রাণী গবেষণায় টিউমার গঠনের ঝুঁকি দেখা গেছে, যদিও মানুষের ক্ষেত্রে এর প্রাসঙ্গিকতা সম্পূর্ণরূপে প্রমাণিত নয়।

ফার্মাকোডাইনামিক্স

স্পাইরোনোল্যাকটোন একটি প্রতিযোগিতামূলক অ্যালডোস্টেরন রিসেপ্টর অ্যান্টাগনিস্ট। এটি কিডনির ডিস্টাল টিউবিউলে থাকা অ্যালডোস্টেরন রিসেপ্টরকে ব্লক করে। অ্যালডোস্টেরন সাধারণত সোডিয়াম ও পানি পুনঃশোষণ এবং পটাসিয়াম নিঃসরণ বাড়ায়। স্পাইরোনোল্যাকটোন এই প্রক্রিয়াকে বাধা দিয়ে সোডিয়াম ও পানি নিঃসরণ বাড়ায় এবং পটাসিয়াম ধরে রাখে। এছাড়া, এটি অ্যান্ড্রোজেন রিসেপ্টরকেও ব্লক করে, যা এর অ্যান্টি-অ্যান্ড্রোজেনিক প্রভাবের কারণ।

কর্ম প্রক্রিয়া

এটি কিডনির দূরবর্তী সংvoluted টিউবিউল এবং কালেক্টিং ডাক্টে কাজ করে। এটি অ্যালডোস্টেরন রিসেপ্টরের সাথে আবদ্ধ হয়ে অ্যালডোস্টেরনের কার্যকারিতা প্রতিরোধ করে। এর ফলে, সোডিয়াম-পটাসিয়াম বিনিময় প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হয়, যার পরিণতিতে শরীর থেকে সোডিয়াম এবং পানি বেরিয়ে যায় এবং পটাসিয়াম শরীরে থেকে যায়। এই ক্রিয়ার ফলে রক্তচাপ কমে এবং শরীরের অতিরিক্ত তরল হ্রাস পায়।

মাত্রা

মাত্রা রোগের ধরন এবং তীব্রতার উপর নির্ভর করে।

  • ইডিমা বা উচ্চ রক্তচাপ: প্রতিদিন ২৫ থেকে ১০০ মিলিগ্রাম, যা একটি বা দুটি বিভক্ত ডোজে নেওয়া হয়।
  • হার্ট ফেইলিওর: সাধারণত প্রতিদিন ১২.৫ থেকে ২৫ মিলিগ্রাম।
  • হিরসুটিজম/ব্রণ: প্রতিদিন ৫০ থেকে ২০০ মিলিগ্রাম।

সেবনবিধি

ট্যাবলেটটি প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে, খাবারের সাথে গ্রহণ করুন, কারণ এটি ঔষধের শোষণ বাড়ায় এবং পেটের অস্বস্তি কমাতে পারে। যদি দিনে একবার গ্রহণ করেন, তবে সকালে নেওয়া ভালো। যদি দিনে একাধিক ডোজ গ্রহণ করেন, তবে ডোজগুলোকে সমান সময়ের ব্যবধানে নিন, কিন্তু সন্ধ্যার পর গ্রহণ করা এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়িয়ে রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। ট্যাবলেটটি পানি দিয়ে সম্পূর্ণ গিলে ফেলুন।

কাজ করতে কত সময় লাগে?

এর ডাইইউরেটিক প্রভাব শুরু হতে সাধারণত ১ থেকে ৩ দিন সময় লাগে এবং পূর্ণ প্রভাব পেতে ২ থেকে ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত লাগতে পারে।

শোষণ

মুখে সেবনের পর এটি ভালোভাবে শোষিত হয়। খাবারের সাথে গ্রহণ করলে এর শোষণ বৃদ্ধি পায়।

বিতরণের পরিমাণ

এটি এবং এর সক্রিয় মেটাবোলাইটগুলো শরীরের বিভিন্ন টিস্যুতে বিতরণ হয়।

প্রোটিন বাইন্ডিং

স্পাইরোনোল্যাকটোন এবং এর প্রধান সক্রিয় মেটাবোলাইট, ক্যানরেনোন (Canrenone), উভয়ই প্লাজমা প্রোটিনের সাথে অত্যন্ত উচ্চ মাত্রায় (>৯০%) আবদ্ধ থাকে।

বিপাক

এটি লিভারে দ্রুত এবং ব্যাপকভাবে বিপাকিত হয়ে কয়েকটি সক্রিয় মেটাবোলাইটে (যেমন: ক্যানরেনোন) পরিণত হয়।

অর্ধ জীবন

স্পাইরোনোল্যাকটোনের নিজের অর্ধ-জীবন সংক্ষিপ্ত (প্রায় ১.৪ ঘন্টা), কিন্তু এর সক্রিয় মেটাবোলাইটগুলোর অর্ধ-জীবন দীর্ঘ (প্রায় ১৬.৫ ঘন্টা)।

নির্মূল

এর বিপাকীয় অবশিষ্টাংশগুলো প্রধানত কিডনির মাধ্যমে প্রস্রাবের সাথে এবং কিছুটা পিত্তরসের মাধ্যমে মলের সাথে নির্গত হয়।

ঔষধের মিথস্ক্রিয়া

ACE ইনহিবিটর, অ্যাঞ্জিওটেনসিন II রিসেপ্টর ব্লকার (ARBs), পটাসিয়াম সাপ্লিমেন্ট, বা অন্যান্য পটাসিয়াম-স্পেয়ারিং ডাইইউরেটিকসের সাথে ব্যবহারে হাইপারক্যালেমিয়ার (রক্তে পটাসিয়ামের উচ্চ মাত্রা) ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়। NSAIDs (যেমন: আইবুপ্রোফেন) এর কার্যকারিতা কমাতে পারে এবং কিডনির উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।

রোগ মিথস্ক্রিয়া

কিডনির সমস্যাযুক্ত রোগীদের ক্ষেত্রে হাইপারক্যালেমিয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি, তাই এটি সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা উচিত বা পরিহার করা উচিত। লিভারের সমস্যাযুক্ত রোগীদের ক্ষেত্রে ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতার ঝুঁকি থাকে।

খাদ্য মিথস্ক্রিয়া

পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (যেমন: কলা, কমলা, আলু) এবং লবণ বিকল্প (salt substitutes) যাতে পটাসিয়াম ক্লোরাইড থাকে, তা অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন, কারণ এটি হাইপারক্যালেমিয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

ব্যবহারের দিকনির্দেশনা

আপনার যদি কিডনির রোগ বা ডায়াবেটিস থাকে, তবে চিকিৎসা শুরুর আগে চিকিৎসককে জানান। চিকিৎসা চলাকালীন নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করে পটাসিয়াম এবং কিডনির কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করা আবশ্যক। মাথা ঘোরা বা ক্লান্তিবোধ হলে গাড়ি চালানো বা ভারী যন্ত্রপাতি পরিচালনার সময় সতর্ক থাকুন। পেশীতে দুর্বলতা, ক্লান্তি বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের মতো হাইপারক্যালেমিয়ার লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসা সহায়তা নিন।

প্রতিনির্দেশনা

হাইপারক্যালেমিয়া, অ্যাডিসন ডিজিজ, গুরুতর কিডনি বিকল এবং অ্যানুরিয়া (প্রস্রাব তৈরি না হওয়া) রোগীদের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা যাবে না।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে গাইনিকোমাস্টিয়া (পুরুষদের স্তন বৃদ্ধি), স্তনে ব্যথা, মাসিক অনিয়মিত হওয়া, যৌন অক্ষমতা, এবং হজমজনিত সমস্যা।

বিরূপ প্রভাব

সবচেয়ে গুরুতর বিরূপ প্রভাব হলো হাইপারক্যালেমিয়া, যা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন এবং এমনকি কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণ হতে পারে। এছাড়া, ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতা এবং ডিহাইড্রেশন হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় ব্যবহার

গর্ভাবস্থায় এর ব্যবহার সাধারণত সুপারিশ করা হয় না। প্রাণী গবেষণায় এটি পুরুষ ভ্রূণের বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

স্তন্যদানকালে ব্যবহার

এর সক্রিয় মেটাবোলাইট মায়ের বুকের দুধে নিঃসৃত হয়। শিশুর উপর সম্ভাব্য ঝুঁকির কারণে স্তন্যদানকালে এর ব্যবহার সতর্কতার সাথে বিবেচনা করা হয়।

বিষাক্ততা

এর তীব্র বিষাক্ততা বিরল, তবে উচ্চ মাত্রায় এটি ডিহাইড্রেশন এবং হাইপারক্যালেমিয়ার কারণ হতে পারে।

সতর্কতা

রক্তে পটাসিয়ামের মাত্রা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা, বিশেষ করে বয়স্ক এবং কিডনির সমস্যাযুক্ত রোগীদের ক্ষেত্রে।

মাত্রাধিক্যতা

মাত্রাধিক্যতার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে তন্দ্রা, মানসিক বিভ্রান্তি, র‍্যাশ এবং হাইপারক্যালেমিয়া। এক্ষেত্রে অবিলম্বে চিকিৎসা সহায়তা প্রয়োজন।

বিপরীত

এর কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষেধক (antidote) নেই। চিকিৎসা মূলত সহায়ক ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল এবং হাইপারক্যালেমিয়া নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়।

সংরক্ষণ

ঔষধটি ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় (২৫° সেলসিয়াসের নিচে), আলো ও আর্দ্রতা থেকে দূরে রাখুন। শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন।

ব্যবহার

ব্রণ, অ্যাসাইটস, কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিউর (CHF), শোথ, উচ্চ রক্তচাপ (উচ্চ রক্তচাপ), হাইপোক্যালেমিয়া, ইডিওপ্যাথিক হারসুটিজম, Nephrotic সিন্ড্রোম, প্রাথমিক হাইপারালডোস্টেরনিজম, সেকেন্ডারি হাইপারালডোস্টেরনিজম, কম ইজেকশন ভগ্নাংশের সাথে ক্রনিক হার্ট ফেইলিউর (NYHA ক্লাস III), কম ইজেকশন ভগ্নাংশ সহ দীর্ঘস্থায়ী হার্ট ফেইলিউর (NYHA ক্লাস IV), ইডিওপ্যাথিক হাইপারালডোস্টেরনিজম

ডকোফার এর দাম কত? ডকোফার এর দাম

ডকোফার in Bangla
Docofer in bangla
বাণিজ্যিক নাম ডকোফার
জেনেরিক Spironolactone
ধরণ ইনজেকশন, সিরাপ, ট্যাবলেট
পরিমাপ 1.5mg
দাম
চিকিৎসাগত শ্রেণি
উৎপাদনকারী Goddres Pharmaceuticals Pvt Ltd
উপলভ্য দেশ India
সর্বশেষ সম্পাদনা January 7, 2025 at 1:49 am

খাওয়ার নিয়ম / ব্যবহারের নিয়ম

ডকোফার খাওয়ার নিয়ম / ব্যবহারের নিয়ম

আরো বিস্তারিত দেখুন ডকোফার

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

সতর্কতা

মিথস্ক্রিয়া

গর্ভাবস্থাকালীন ব্যবহার

বৈপরীত্য

অতিরিক্ত সতর্কতা

তীব্র ওভারডোজ

অন্যান্য ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া

সংরক্ষণ

*** Taking medicines without doctor's advice can cause long-term problems.
Share