Exzilor 0.5 mg+10 mg Tablet

নির্দেশনা

ফ্লুপেন্টিকসল এবং মেলিট্রাসেন এর সংমিশ্রণটি মূলত বিষণ্ণতা (depression) এবং উদ্বেগ (anxiety) জনিত মানসিক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি বিশেষ করে সেই সব রোগীদের জন্য কার্যকর যাদের বিষণ্ণতার সাথে উদ্বেগ, অস্থিরতা এবং শক্তির অভাবের মতো লক্ষণ থাকে। এছাড়া এটি সাইকোসোমাটিক ডিজঅর্ডার (যেখানে মানসিক সমস্যা শারীরিক উপসর্গ হিসেবে দেখা দেয়) এর ক্ষেত্রেও নির্দেশিত হয়।

ফার্মাকোলজি

এই ঔষধটি দুটি ভিন্ন উপাদানের সংমিশ্রণ। ফ্লুপেন্টিকসল একটি টিপিক্যাল অ্যান্টিসাইকোটিক যা থায়োক্সানথিন (thioxanthene) গ্রুপের অন্তর্গত। এটি মস্তিষ্কের ডোপামিন রিসেপ্টর (D1 এবং D2) ব্লক করে কাজ করে। মেলিট্রাসেন একটি ট্রাইসাইক্লিক অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট (TCA) যা মস্তিষ্কে নরঅ্যাড্রেনালিন এবং সেরোটোনিন নামক নিউরোট্রান্সমিটারের পুনঃশোষণ (reuptake) বাধা দিয়ে তাদের কার্যকারিতা বাড়ায়। এই দুটি ঔষধের সম্মিলিত ক্রিয়া বিষণ্ণতা ও উদ্বেগ উভয়ই কমাতে সাহায্য করে।

মাত্রা

প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সাধারণ মাত্রা হলো দিনে ২টি ট্যাবলেট (সকালে ১টি এবং দুপুরে ১টি)। গুরুতর ক্ষেত্রে, সকালের ডোজ ২টি ট্যাবলেটে বাড়ানো যেতে পারে। সর্বোচ্চ দৈনিক মাত্রা ৪টি ট্যাবলেট। বয়স্ক রোগীদের জন্য সাধারণত দিনে ১টি ট্যাবলেট (সকালে) দিয়ে চিকিৎসা শুরু করার পরামর্শ দেওয়া হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মাত্রা পরিবর্তন করা উচিত নয়।

সেবনবিধি

এই ট্যাবলেটটি মুখে খেতে হয়। এটি খাবারের সাথে বা খাবার ছাড়াও গ্রহণ করা যেতে পারে। সাধারণত সন্ধ্যার পর এই ঔষধ গ্রহণ না করার পরামর্শ দেওয়া হয় কারণ এটি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে ঔষধ গ্রহণ করা উচিত।

কিভাবে কাজ করে

ফ্লুপেন্টিকসল মস্তিষ্কের ডোপামিন সিগন্যালিং কমিয়ে মানসিক স্থিরতা আনে এবং উদ্বেগ কমায়। অন্যদিকে, মেলিট্রাসেন মস্তিষ্কে দুটি গুরুত্বপূর্ণ নিউরোট্রান্সমিটার, নরঅ্যাড্রেনালিন এবং সেরোটোনিনের মাত্রা বাড়িয়ে কাজ করে, যা মেজাজ উন্নত করে এবং বিষণ্ণতার লক্ষণগুলি থেকে মুক্তি দেয়। এই দুইয়ের সম্মিলিত প্রভাবে রোগী মানসিকভাবে সতেজ ও স্থিতিশীল অনুভব করে।

কাজ করতে কত সময় লাগে?

এই ঔষধের কার্যকারিতা শুরু হতে সাধারণত ১ থেকে ২ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। সম্পূর্ণ প্রভাব পেতে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তাই ধৈর্য ধরে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন চালিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

শোষণ

মুখে সেবনের পর উভয় উপাদানই পরিপাকতন্ত্র থেকে ভালোভাবে শোষিত হয়। রক্তে ফ্লুপেন্টিকসলের সর্বোচ্চ মাত্রা পৌঁছাতে প্রায় ৪-৮ ঘণ্টা এবং মেলিট্রাসেনের ক্ষেত্রে প্রায় ৪ ঘণ্টা সময় লাগে।

ঔষধের মিথক্রিয়া

এই ঔষধ অন্যান্য কিছু ঔষধের সাথে মিথস্ক্রিয়া করতে পারে। যেমন: MAO ইনহিবিটরস, অ্যালকোহল, বারবিচুরেটস এবং অন্যান্য সিএনএস ডিপ্রেসেন্ট (কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে দমন করে এমন ঔষধ) এর সাথে এটি গ্রহণ করা উচিত নয় কারণ এটি মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। অ্যাড্রেনার্জিক ঔষধ (যেমন এপিনেফ্রিন) এর প্রভাব বাড়িয়ে দিতে পারে।

রোগ মিথস্ক্রিয়া

গুরুতর হৃদরোগ, অ্যারিথমিয়া, গ্লুকোমা (চোখের উচ্চ চাপ), মূত্রথলির সমস্যা (urinary retention) এবং അപස්മാരം (epilepsy) আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এই ঔষধ ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। এছাড়া, লিভার বা কিডনির গুরুতর সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ আবশ্যক।

খাদ্য মিথস্ক্রিয়া

অ্যালকোহল বা মদ জাতীয় পানীয়ের সাথে এই ঔষধ গ্রহণ করলে অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব এবং মানসিক অবসাদ দেখা দিতে পারে। তাই চিকিৎসার সময় অ্যালকোহল পরিহার করা উচিত।

ব্যবহারের দিকনির্দেশনা

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া হঠাৎ করে ঔষধ বন্ধ করা উচিত নয়, কারণ এর ফলে প্রত্যাহারের লক্ষণ (withdrawal symptoms) দেখা দিতে পারে। গাড়ি চালানো বা ভারী মেশিন পরিচালনার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, কারণ এটি ঘুম ঘুম ভাব সৃষ্টি করতে পারে।

প্রতিনির্দেশনা

ফ্লুপেন্টিকসল, মেলিট্রাসেন বা ঔষধের অন্য কোনো উপাদানের প্রতি অতিসংবেদনশীলতা থাকলে এটি প্রতিনির্দেশিত। তীব্র অ্যালকোহল, বারবিচুরেট বা ওপিঅয়েড বিষক্রিয়া, কোমা বা রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার গুরুতর অবনতির ক্ষেত্রেও এটি ব্যবহার করা যাবে না। MAO ইনহিবিটরস গ্রহণকারী রোগীদের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে ঘুম ঘুম ভাব, মুখ শুকিয়ে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া, ওজন বৃদ্ধি, এবং হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া। কিছু ক্ষেত্রে অস্থিরতা এবং ঘুমের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে টারডিভ ডিস্কাইনেসিয়া (অনৈচ্ছিক পেশী সঞ্চালন) হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় ব্যবহার

গর্ভাবস্থায় এই ঔষধের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত নয়। অপরিহার্য না হলে গর্ভাবস্থায় এটি ব্যবহার না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে ঝুঁকি এবং উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করতে হবে।

স্তন্যদানকালে ব্যবহার

ফ্লুপেন্টিকসল এবং মেলিট্রাসেন উভয়ই অল্প পরিমাণে মায়ের দুধে নিঃসৃত হতে পারে। তাই স্তন্যদানকালে এই ঔষধ ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।

বিষাক্ততা

এই ঔষধের বিষাক্ততা মূলত এর উপাদানগুলির সম্মিলিত প্রভাবের কারণে হয়। বিশেষত কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র এবং কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের উপর এর বিষাক্ত প্রভাব দেখা যায়।

সতর্কতা

বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে কম মাত্রায় ঔষধ শুরু করার পরামর্শ দেওয়া হয়। যাদের അപස්മാരം বা কনভালশনের ইতিহাস আছে, তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন। চিকিৎসার সময় রোগীর মানসিক অবস্থার পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা উচিত।

মাত্রাধিক্যতা

মাত্রাধিক্যতার ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি, তীব্র ঘুম, হৃদস্পন্দনের অস্বাভাবিকতা, খিঁচুনি, শ্বাসকষ্ট এবং কোমার মতো গুরুতর লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এটি একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি এবং রোগীকে অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি করা প্রয়োজন।

বিপরীত

মাত্রাধিক্যতার কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিডোট নেই। চিকিৎসা মূলত সহায়ক এবং লক্ষণভিত্তিক (supportive and symptomatic)। গ্যাস্ট্রিক ল্যাভেজ এবং অ্যাক্টিভেটেড চারকোল ব্যবহার করে ঔষধের শোষণ কমানো যেতে পারে।

সংরক্ষণ

ঔষধটি আলো থেকে দূরে, শুষ্ক ও ঠাণ্ডা স্থানে (৩০° সেলসিয়াসের নিচে) সংরক্ষণ করতে হবে। শিশুদের নাগালের বাইরে রাখা আবশ্যক।

বিস্তারের আয়তন

ফ্লুপেন্টিকসলের বিস্তারের আয়তন (Volume of Distribution) বেশ বড় (প্রায় ১৪.৬ লিটার/কেজি), যা নির্দেশ করে এটি শরীরের টিস্যুতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। মেলিট্রাসেনের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য।

অর্ধ জীবন

ফ্লুপেন্টিকসলের অর্ধ-জীবন (Half-life) প্রায় ৩৫ ঘণ্টা এবং মেলিট্রাসেনের অর্ধ-জীবন প্রায় ১৯ ঘণ্টা। এই দীর্ঘ অর্ধ-জীবনের কারণে এটি দিনে একবার বা দুইবার গ্রহণ করাই যথেষ্ট।

নির্মূল

উভয় ঔষধই প্রধানত লিভারে বিপাকিত (metabolized) হয় এবং এর মেটাবোলাইটগুলি প্রস্রাব ও মলের মাধ্যমে শরীর থেকে নিষ্কাশিত হয়।

নির্মূলের পথ

ফ্লুপেন্টিকসল এবং মেলিট্রাসেনের বিপাকজাত পদার্থগুলো মূলত প্রস্রাবের মাধ্যমে এবং অল্প পরিমাণে মলের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।

এই প্রিপারেশনে আছে দুটি সু-পরিচিত এবং সু-প্রমাণিত যৌগঃ ফ্লুপেনটিক্সল-একটি নিউরোলেপ্টিক, স্বল্প মাত্রায় যার নিজস্ব দুশ্চিন্তা প্রশমনকারী এবং অবসন্নতাবিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং মেলিট্রাসিন-একটি বাইপোলার থাইমোলেগ্রিক, স্বল্প মাত্রায় যার এ্যাকটিভিটিং বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যৌথভাবে, এই যৌগসমূহ এমন একটি প্রস্তুতি যা অবসন্নতাবিরোধী, দৃশ্চিত্তা প্রশমনকারী এবং এ্যাকটিভেটিং বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করে। ফ্লপেনটিক্সল মুখে গ্রহণ করার প্রায় চার ঘন্টা পর সিরামে সর্বোচ্চ ঘনত্বে পৌঁছায় এবং মেলিট্রাসিন মুখে গ্রহণ করার প্রায় চার ঘন্টা পর সিরামে সর্বোচ্চ ঘনত্বে পৌঁছায়। ফ্লপেনটিক্সল-এর বায়োলোজিক্যাল হাফ-লাইফ প্রায় ৩৫ ঘন্টা এবং মেট্রিাসিন-এর বায়োলোজিক্যাল হাফ-লাইফ প্রায় ১৯ ঘন্টা। ফ্লপেনটিক্সল এবং মেলিট্রাসিন-এর একত্র ব্যবহার, আলাদা আলাদা যৌগের ফার্মাকোকাইনেটিক বৈশিষ্ট্যকে প্রভাবিত করে না।