ফোলিকান

সারসংক্ষেপ

ফলিক অ্যাসিড (Folic Acid) ভিটামিন বি৯ (Vitamin B9)-এর একটি সিন্থেটিক রূপ। এটি মানবদেহের জন্য একটি অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান, যা নতুন কোষ তৈরি এবং ডিএনএ (DNA) সংশ্লেষণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রধানত ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতিজনিত রক্তশূন্যতা (anemia) প্রতিরোধ ও চিকিৎসা এবং গর্ভকালীন সময়ে ভ্রূণের নিউরাল টিউব ডিফেক্ট (neural tube defects) বা জন্মগত ত্রুটি রোধ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি ট্যাবলেট হিসেবে পাওয়া যায় এবং অনেক খাবারেও ফোর্টিফায়েড বা সমৃদ্ধ করা থাকে।

ব্যাকগ্রাউন্ড

ফলিক অ্যাসিড ১৯৪১ সালে প্রথম আবিষ্কৃত হয়। এর প্রাকৃতিক রূপকে ফোলেট (folate) বলা হয়, যা সবুজ শাক-সবজি, ফল এবং শস্যে পাওয়া যায়। ফলিক অ্যাসিড হলো এর রাসায়নিকভাবে তৈরি স্থিতিশীল রূপ, যা সাপ্লিমেন্ট এবং ফোর্টিফায়েড খাবারে ব্যবহৃত হয় এবং শরীর দ্বারা ফোলেটের চেয়ে ভালোভাবে শোষিত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে একটি অপরিহার্য ঔষধ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।

ইঙ্গিত

ফলিক অ্যাসিড নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য নির্দেশিত:

  • ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি: অপুষ্টি, ম্যালঅ্যাবসর্পশন বা কিছু ঔষধের ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট ঘাটতির চিকিৎসা।
  • মেগালোব্লাস্টিক অ্যানিমিয়া: ফলিক অ্যাসিডের অভাবজনিত রক্তশূন্যতার চিকিৎসা।
  • জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ: গর্ভধারণের আগে এবং গর্ভকালীন সময়ে নিউরাল টিউব ডিফেক্ট (যেমন: স্পাইনা বিফিডা) প্রতিরোধ করার জন্য।
  • উচ্চ হোমোসিস্টাইন স্তর: রক্তে হোমোসিস্টাইনের মাত্রা কমাতে, যা হৃদরোগের ঝুঁকির সাথে সম্পর্কিত।

Associated Conditions

এটি কিডনি রোগে ডায়ালাইসিস নিচ্ছেন এমন রোগীদের, লিভারের রোগে আক্রান্তদের এবং মেথোট্রেক্সেট বা কিছু খিঁচুনি-বিরোধী ঔষধ গ্রহণকারী রোগীদের ক্ষেত্রে সহায়ক চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

বিরোধীতা এবং ব্ল্যাকবক্স সতর্কতা

যাদের ফলিক অ্যাসিডের প্রতি অতিসংবেদনশীলতা বা অ্যালার্জি আছে, তাদের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা যাবে না। নির্ণয় না হওয়া মেগালোব্লাস্টিক অ্যানিমিয়ার ক্ষেত্রে এটি সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা উচিত, কারণ এটি ভিটামিন বি১২-এর অভাবকে আড়াল করতে পারে। এর কোনো নির্দিষ্ট ব্ল্যাকবক্স সতর্কতা নেই।

ফার্মাকোডাইনামিক্স

ফলিক অ্যাসিড শরীরে প্রবেশ করে এর সক্রিয় রূপ টেট্রাহাইড্রোফোলেট (Tetrahydrofolate - THF)-এ রূপান্তরিত হয়। THF একটি কো-এনজাইম হিসেবে কাজ করে, যা পিউরিন এবং পাইরিমিডিন নামক নিউক্লিওটাইড সংশ্লেষণের জন্য অপরিহার্য। এই নিউক্লিওটাইডগুলো ডিএনএ এবং আরএনএ (RNA) তৈরির মূল উপাদান। এছাড়া এটি অ্যামিনো অ্যাসিড বিপাকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কর্ম প্রক্রিয়া

ফলিক অ্যাসিড শরীর দ্বারা শোষিত হওয়ার পর লিভারে টেট্রাহাইড্রোফোলেটে (THF) রূপান্তরিত হয়। THF বিভিন্ন এক-কার্বন স্থানান্তর বিক্রিয়ায় (one-carbon transfer reactions) অংশ নেয়। এই বিক্রিয়াগুলো কোষের বৃদ্ধি এবং বিভাজনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ডিএনএ, আরএনএ এবং প্রোটিন তৈরির প্রক্রিয়াকে সচল রাখে। এর অভাব হলে কোষ বিভাজন প্রক্রিয়া, বিশেষ করে রক্তকণিকা এবং ভ্রূণের কোষের মধ্যে, মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

মাত্রা

  • সাধারণ প্রতিরোধ (প্রাপ্তবয়স্ক): প্রতিদিন ৪০০ মাইক্রোগ্রাম (mcg)।
  • গর্ভধারণের পরিকল্পনা ও গর্ভকালীন সময়ে: প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৮০০ মাইক্রোগ্রাম।
  • ঘাটতিজনিত অ্যানিমিয়ার চিকিৎসা: প্রতিদিন ১ থেকে ৫ মিলিগ্রাম (mg)।

সেবনবিধি

ট্যাবলেটটি প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে, এক গ্লাস পানি দিয়ে সম্পূর্ণ গিলে ফেলুন। এটি খাবারের সাথে বা খাবার ছাড়াও গ্রহণ করা যায়। যদি একটি ডোজ নিতে ভুলে যান, তবে মনে পড়ার সাথে সাথে সেটি গ্রহণ করুন। কিন্তু পরবর্তী ডোজের সময় কাছাকাছি হলে, ভুলে যাওয়া ডোজটি এড়িয়ে যান। ডোজ দ্বিগুণ করবেন না। গর্ভধারণের পরিকল্পনা থাকলে, গর্ভধারণের কমপক্ষে এক মাস আগে থেকে এটি গ্রহণ শুরু করা উচিত এবং গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়া উচিত।

কাজ করতে কত সময় লাগে?

রক্তশূন্যতার ক্ষেত্রে, রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়তে এবং উপসর্গের উন্নতি হতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধের জন্য এর কার্যকারিতা নির্ভর করে গর্ভধারণের আগে থেকে এটি গ্রহণ করার উপর।

শোষণ

মুখে সেবনের পর ফলিক অ্যাসিড পরিপাকতন্ত্র (প্রধানত ক্ষুদ্রান্ত্র) থেকে দ্রুত এবং প্রায় সম্পূর্ণরূপে শোষিত হয়।

বিতরণের পরিমাণ

এটি শরীরের সমস্ত টিস্যুতে বিতরণ হয় এবং এর প্রায় অর্ধেক পরিমাণ লিভারে সঞ্চিত থাকে।

প্রোটিন বাইন্ডিং

এটি প্লাজমা প্রোটিনের সাথে মাঝারি মাত্রায় আবদ্ধ থাকে।

বিপাক

এটি প্রধানত লিভারে এবং প্লাজমায় এর সক্রিয় রূপ টেট্রাহাইড্রোফোলেটে বিপাকিত হয়।

অর্ধ জীবন

এর অর্ধ-জীবন মাত্রার উপর নির্ভরশীল, তবে এটি তুলনামূলকভাবে সংক্ষিপ্ত।

নির্মূল

অতিরিক্ত ফলিক অ্যাসিড কিডনির মাধ্যমে প্রস্রাবের সাথে শরীর থেকে নির্গত হয়।

ঔষধের মিথস্ক্রিয়া

কিছু খিঁচুনি-বিরোধী ঔষধ (যেমন: ফেনিটোইন, ফেনোবারবিটাল) ফলিক অ্যাসিডের মাত্রা কমাতে পারে। অন্যদিকে, ফলিক অ্যাসিড এই ঔষধগুলোর কার্যকারিতা কমাতে পারে। মেথোট্রেক্সেট ফলিক অ্যাসিডের কার্যকারিতাকে বাধা দেয়। সালফাসালাজিন ফলিক অ্যাসিডের শোষণ কমাতে পারে।

রোগ মিথস্ক্রিয়া

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রোগ মিথস্ক্রিয়া হলো ভিটামিন বি১২-এর অভাবজনিত রক্তশূন্যতার (পারনিসিয়াস অ্যানিমিয়া) সাথে। ফলিক অ্যাসিড এই রক্তশূন্যতার হেমাটোলজিক্যাল লক্ষণগুলো (রক্তের অবস্থা) উন্নত করতে পারে, কিন্তু এটি ভিটামিন বি১২-এর অভাবজনিত স্নায়বিক ক্ষতি (neurological damage) প্রতিরোধ করতে পারে না এবং সেটিকে আড়াল করে রাখতে পারে, যা অপরিবর্তনীয় ক্ষতির কারণ হতে পারে।

খাদ্য মিথস্ক্রিয়া

সবুজ চা অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে তা ফলিক অ্যাসিডের শোষণকে কিছুটা কমাতে পারে। এছাড়া এর সাথে নির্দিষ্ট কোনো খাবারের মিথস্ক্রিয়া নেই।

ব্যবহারের দিকনির্দেশনা

আপনার যদি খিঁচুনি বা ভিটামিন বি১২-এর অভাবজনিত রক্তশূন্যতার ইতিহাস থাকে, তবে চিকিৎসা শুরুর আগে চিকিৎসককে জানান। গর্ভধারণের পরিকল্পনা থাকলে বা গর্ভবতী হলে ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি, এটি আপনার শিশুর মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের গুরুতর জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ করতে পারে। যদি আপনার কোনো কারণে ম্যালঅ্যাবসর্পশন সিনড্রোম (শরীরে পুষ্টি শোষণ না হওয়া) থাকে, তবে আপনার উচ্চ মাত্রার প্রয়োজন হতে পারে।

প্রতিনির্দেশনা

ফলিক অ্যাসিডের প্রতি পরিচিত অতিসংবেদনশীলতা এবং নির্ণয় না হওয়া পারনিসিয়াস অ্যানিমিয়ার (ভিটামিন বি১২-এর অভাবজনিত) ক্ষেত্রে এটি একা ব্যবহার করা যাবে না।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

প্রস্তাবিত মাত্রায় ফলিক অ্যাসিড সাধারণত খুবই নিরাপদ এবং এর কোনো উল্লেখযোগ্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। কিছু ক্ষেত্রে, পেটে হালকা অস্বস্তি, বমি বমি ভাব, বা মুখে তিক্ত স্বাদ অনুভূত হতে পারে।

বিরূপ প্রভাব

খুব উচ্চ মাত্রায় (দৈনিক ১,০০০ মাইক্রোগ্রামের বেশি) দীর্ঘ সময় ধরে গ্রহণ করলে অনিদ্রা, মানসিক বিভ্রান্তি বা পেটের সমস্যা হতে পারে। ভিটামিন বি১২-এর অভাব থাকলে উচ্চ মাত্রার ফলিক অ্যাসিড স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতিকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

গর্ভাবস্থায় ব্যবহার

গর্ভাবস্থায় এটি গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্পূর্ণ নিরাপদ। এটি ভ্রূণের নিউরাল টিউব ডিফেক্ট প্রতিরোধে সহায়ক।

স্তন্যদানকালে ব্যবহার

স্তন্যদানকালে ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ করা নিরাপদ এবং এটি মায়ের বুকের দুধে নিঃসৃত হয়ে শিশুর চাহিদা পূরণে সহায়তা করে।

বিষাক্ততা

ফলিক অ্যাসিড একটি পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন হওয়ায় এর বিষাক্ততার ঝুঁকি খুবই কম। শরীর অতিরিক্ত পরিমাণ প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেয়।

সতর্কতা

উচ্চ মাত্রায় ফলিক অ্যাসিড থেরাপি শুরু করার আগে ভিটামিন বি১২-এর অভাব নেই তা নিশ্চিত করা আবশ্যক।

মাত্রাধিক্যতা

মাত্রাধিক্যতার ঘটনা বিরল এবং এটি সাধারণত কোনো গুরুতর সমস্যার কারণ হয় না।

বিপরীত

এর কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষেধক (antidote) নেই।

সংরক্ষণ

সাপ্লিমেন্টটি ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায়, আলো ও আর্দ্রতা থেকে দূরে রাখুন। শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন।

ব্যবহার

অ্যানিমিয়া ফোলেটের অভাব, ফোলেটের অভাব, আয়রন ডেফিসিয়েন্সি (আইডি), আয়রন ডেফিসিয়েন্সি অ্যানিমিয়া (IDA), সুপ্ত আয়রনের ঘাটতি, নিউরাল টিউব ডিফেক্ট (NTDs), ভিটামিনের অভাব, মেথোট্রেক্সেট বিষাক্ততা, পুষ্টি সম্পূরক

ফোলিকান এর দাম কত? ফোলিকান এর দাম

ফোলিকান in Bangla
Folican in bangla
বাণিজ্যিক নাম ফোলিকান
জেনেরিক Folic acid
ধরণ ট্যাবলেট
পরিমাপ
দাম
চিকিৎসাগত শ্রেণি
উৎপাদনকারী Med Manor Organics Pvt Ltd
উপলভ্য দেশ India
সর্বশেষ সম্পাদনা January 7, 2025 at 1:49 am

খাওয়ার নিয়ম / ব্যবহারের নিয়ম

ফোলিকান খাওয়ার নিয়ম / ব্যবহারের নিয়ম

আরো বিস্তারিত দেখুন ফোলিকান

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

সতর্কতা

মিথস্ক্রিয়া

গর্ভাবস্থাকালীন ব্যবহার

বৈপরীত্য

অতিরিক্ত সতর্কতা

তীব্র ওভারডোজ

অন্যান্য ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া

সংরক্ষণ

*** Taking medicines without doctor's advice can cause long-term problems.
Share