গ্রিল

নির্দেশনা

ক্লোপিডোগ্রেল একটি অ্যান্টিপ্লেটলেট ঔষধ যা হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং পেরিফেরাল আর্টারিয়াল ডিজিজ (PAD) এর মতো কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমাতে ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণত এমন রোগীদের দেওয়া হয় যাদের 최근 হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হয়েছে, অথবা যাদের PAD আছে। এটি করোনারি আর্টারি স্টেন্টিং-এর পরেও রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করতে অ্যাসপিরিনের সাথে একত্রে ব্যবহৃত হয়।

ফার্মাকোলজি

ক্লোপিডোগ্রেল একটি প্রো-ড্রাগ, যা শরীরে সক্রিয় মেটাবোলাইটে রূপান্তরিত হয়। এটি একটি থিয়েনোপিরিডিন (thienopyridine) শ্রেণীর ঔষধ। এর সক্রিয় মেটাবোলাইট প্লেটলেটের (অনুচক্রিকা) পৃষ্ঠে থাকা P2Y12 রিসেপ্টরকে অপরিবর্তনীয়ভাবে ব্লক করে। এর ফলে অ্যাডিনোসিন ডাইফসফেট (ADP) প্লেটলেটকে সক্রিয় করতে পারে না, যা রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াকে বাধা দেয়।

মাত্রা

প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য স্বাভাবিক প্রতিরোধমূলক মাত্রা হলো দিনে ৭৫ মিগ্রা একবার। তীব্র করোনারি সিনড্রোম বা স্টেন্টিং-এর ক্ষেত্রে, একটি লোডিং ডোজ (প্রাথমিক উচ্চ মাত্রা) ৩০০ মিগ্রা বা ৬০০ মিগ্রা দেওয়া হতে পারে, এবং তারপরে দৈনিক ৭৫ মিগ্রা করে চালিয়ে যাওয়া হয়।

সেবনবিধি

ক্লোপিডোগ্রেল ট্যাবলেট মুখে খেতে হয়। এটি প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে, খাবারের সাথে বা খাবার ছাড়া গ্রহণ করা যেতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ঔষধ সেবন করা উচিত।

কিভাবে কাজ করে

ক্লোপিডোগ্রেল প্লেটলেট বা অনুচক্রিকার কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। প্লেটলেট হলো রক্তের কোষ যা রক্তনালির আঘাতের স্থানে একত্রিত হয়ে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। ক্লোপিডোগ্রেল প্লেটলেটের ADP-নির্ভর সক্রিয়করণকে বাধা দিয়ে রক্তনালির ভেতরে অপ্রয়োজনীয় রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করে, যা হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের কারণ হতে পারে।

কাজ করতে কত সময় লাগে?

একটি ৭৫ মিগ্রা ডোজের পরে, প্লেটলেট প্রতিরোধের প্রভাব প্রায় ২ ঘন্টার মধ্যে শুরু হয় এবং ৫-৭ দিনের নিয়মিত সেবনের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। একটি ৩০০ মিগ্রা লোডিং ডোজ দেওয়ার পর এর কার্যকারিতা দ্রুত শুরু হয়।

শোষণ

মুখে সেবনের পর ক্লোপিডোগ্রেল দ্রুত শোষিত হয়। তবে এটি একটি প্রো-ড্রাগ হওয়ায়, এর বেশিরভাগ অংশ লিভারে বিপাকিত হয়ে সক্রিয় রূপে পরিবর্তিত হয়।

ঔষধের মিথক্রিয়া

ক্লোপিডোগ্রেল অন্যান্য রক্ত পাতলা করার ঔষধ (যেমন ওয়ারফারিন, হেপারিন), এনএসএআইডি (NSAIDs) (যেমন আইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রোক্সেন) এবং কিছু অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট (SSRI, SNRI) এর সাথে ব্যবহারে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। প্রোটন পাম্প ইনহিবিটরস (PPIs) যেমন ওমিপ্রাজল এবং এসোমিপ্রাজল ক্লোপিডোগ্রেলের কার্যকারিতা কমাতে পারে, তাই এদের একত্রে ব্যবহার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়।

রোগ মিথস্ক্রিয়া

যাদের সক্রিয় রক্তপাতজনিত সমস্যা (যেমন পেপটিক আলসার বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ) আছে, তাদের ক্ষেত্রে ক্লোপিডোগ্রেল ব্যবহার করা উচিত নয়। গুরুতর লিভারের রোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত কারণ এটি রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

খাদ্য মিথস্ক্রিয়া

ক্লোপিডোগ্রেলের সাথে নির্দিষ্ট কোনো খাবারের বিশেষ মিথস্ক্রিয়া নেই। তবে, স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

ব্যবহারের দিকনির্দেশনা

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই ঔষধ বন্ধ করা উচিত নয়, বিশেষ করে স্টেন্টিং-এর পরে, কারণ এতে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বেড়ে যেতে পারে। কোনো সার্জারি বা দাঁতের চিকিৎসার আগে আপনার ডাক্তারকে অবশ্যই জানাতে হবে যে আপনি ক্লোপিডোগ্রেল গ্রহণ করছেন।

প্রতিনির্দেশনা

ক্লোপিডোগ্রেল বা এর যেকোনো উপাদানের প্রতি অতিসংবেদনশীলতা থাকলে এটি ব্যবহার করা যাবে না। সক্রিয় প্যাথোলজিক্যাল রক্তপাত যেমন ইন্ট্রাক্রেনিয়াল হেমোরেজ বা পেপটিক আলসার থাকলে এটি প্রতিনির্দেশিত।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

সবচেয়ে সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো রক্তপাত, যা হালকা (যেমন সহজে কালশিটে পড়া বা নাক দিয়ে রক্ত পড়া) থেকে গুরুতর (যেমন পেটে বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ) হতে পারে। অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা, বদহজম এবং র‍্যাশ।

গর্ভাবস্থায় ব্যবহার

গর্ভাবস্থায় ক্লোপিডোগ্রেলের নিরাপত্তা সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য নেই। এটি কেবল তখনই ব্যবহার করা উচিত যখন এর উপকারিতা ভ্রূণের সম্ভাব্য ঝুঁকির চেয়ে বেশি হয়। ব্যবহারের পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ আবশ্যক।

স্তন্যদানকালে ব্যবহার

ক্লোপিডোগ্রেল মায়ের দুধে নিঃসৃত হয় কিনা তা জানা যায়নি। তাই, স্তন্যদানকালে এই ঔষধ ব্যবহারের সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত এবং চিকিৎসকের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

বিষাক্ততা

ক্লোপিডোগ্রেলের বিষাক্ততা মূলত রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলার সাথেই সম্পর্কিত।

সতর্কতা

যাদের রক্তপাতের ঝুঁকি বেশি (যেমন, সাম্প্রতিক ট্রমা, সার্জারি বা অন্যান্য রক্তপাতজনিত রোগ), তাদের ক্ষেত্রে ক্লোপিডোগ্রেল ব্যবহারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। অস্ত্রোপচারের ৭ দিন আগে সাধারণত এটি বন্ধ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

মাত্রাধিক্যতা

মাত্রাধিক্যতার ফলে রক্তপাতের সময় দীর্ঘায়িত হতে পারে এবং রক্তক্ষরণজনিত জটিলতা দেখা দিতে পারে। মাত্রাধিক্যতার ক্ষেত্রে রোগীকে অবিলম্বে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত।

বিপরীত

মাত্রাধিক্যতার ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিডোট নেই। প্রয়োজনে প্লেটলেট ট্রান্সফিউশন (platelet transfusion) দ্বারা এর অ্যান্টিপ্লেটলেট প্রভাবকে বিপরীত করা যেতে পারে।

সংরক্ষণ

ক্লোপিডোগ্রেল শুষ্ক স্থানে, ২৫° সেলসিয়াস (৭৭° ফারেনহাইট) তাপমাত্রার নিচে সংরক্ষণ করতে হবে। আলো ও আর্দ্রতা থেকে দূরে এবং শিশুদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে।

বিস্তারের আয়তন

এর সক্রিয় মেটাবোলাইটের বিস্তারের আয়তন নির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা কঠিন কারণ এটি প্লেটলেটের সাথে অপরিবর্তনীয়ভাবে আবদ্ধ হয়।

অর্ধ জীবন

ক্লোপিডোগ্রেলের সক্রিয় মেটাবোলাইটের অর্ধ-জীবন (Half-life) প্রায় ৬ ঘণ্টা। তবে প্লেটলেটের উপর এর প্রভাব অপরিবর্তনীয় হওয়ায়, এর কার্যকারিতা প্লেটলেটের জীবনকাল (৭-১০ দিন) পর্যন্ত স্থায়ী থাকে।

নির্মূল

ক্লোপিডোগ্রেল এবং এর মেটাবোলাইটগুলি প্রায় ৫০% প্রস্রাবের মাধ্যমে এবং প্রায় ৪৬% মলের মাধ্যমে শরীর থেকে নিষ্কাশিত হয়।

নির্মূলের পথ

এর বিপাকজাত পদার্থগুলো প্রধানত কিডনি (প্রস্রাব) এবং কিছুটা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্ট (মল) দিয়ে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।

ক্লোপিডোগ্রেল একটি প্রোড্রাগ। ক্লোপিডোগ্রেল এর একটিভ মেটাবোলাইট প্লাটিলেটে অবস্থিত P2Y12 শ্রেণির এডিপি রিসেপ্টরের সাথে স্থায়ী বন্ধন তৈরির মাধ্যমে প্লাটিলেটের সক্রিয় ও একত্রিত হওয়াকে বাঁধা প্রদান করে। একক মাত্রা সেবনের ২ ঘন্টা পরই প্লাটিলেটের মাত্রা ভিত্তিক একত্রিকরণ দেখা যেতে পারে। নিয়মমাফিক প্রতিনিয়ত ৭৫ মিঃগ্রাঃ হিসেবে সেবনে প্রথম দিনেই এডিপি ভিত্তিক প্লেটলেট একত্রিকরণ বন্ধ হয় যা ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যে একটি স্থায়ী মাত্রায় পৌছায়।