Makecal

সারসংক্ষেপ

কোলিক্যালসিফেরল (Makecal) ভিটামিন ডি৩ এর রাসায়নিক নাম, যা একটি ফ্যাট-সলিউবল (চর্বিতে দ্রবণীয়) ভিটামিন। এটি মানবদেহে ক্যালসিয়াম এবং ফসফেট শোষণে সহায়তা করে, যা শক্তিশালী হাড় ও দাঁত গঠন এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য অপরিহার্য। এটি প্রধানত সূর্যের আলোর সংস্পর্শে ত্বকে তৈরি হয় এবং কিছু খাবার (যেমন: তৈলাক্ত মাছ, ডিমের কুসুম) ও ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট হিসেবে পাওয়া যায়। এর অভাব হলে শিশুদের রিকেটস এবং প্রাপ্তবয়স্কদের অস্টিওম্যালাসিয়া ও অস্টিওপোরোসিস হতে পারে।

ব্যাকগ্রাউন্ড

কোলিক্যালসিফেরল একটি প্রো-হরমোন হিসেবে কাজ করে। এটি ১৯৩০-এর দশকে রিকেটস রোগের কারণ এবং প্রতিকার অনুসন্ধানের সময় আবিষ্কৃত হয়। বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন যে সূর্যের আলো বা নির্দিষ্ট কিছু খাবার এই রোগ প্রতিরোধ করতে পারে, যা পরবর্তীতে ভিটামিন ডি আবিষ্কারের দিকে পরিচালিত করে। এটি মানবদেহে ৭-ডিহাইড্রোকোলেস্টেরল থেকে অতিবেগুনী রশ্মির (UVB) প্রভাবে তৈরি হয়।

ইঙ্গিত

কোলিক্যালসিফেরল নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য নির্দেশিত:

• ভিটামিন ডি-এর অভাব: ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য।
• রিকেটস (Rickets): শিশুদের হাড় নরম ও বিকৃত হয়ে যাওয়া রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য।
• অস্টিওম্যালাসিয়া (Osteomalacia): প্রাপ্তবয়স্কদের হাড় নরম হয়ে যাওয়ার চিকিৎসায়।
• অস্টিওপোরোসিস (Osteoporosis): হাড় ক্ষয় রোধ করতে এবং এর চিকিৎসায় ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্টের সাথে একত্রে ব্যবহৃত হয়।
• হাইপোপ্যারাথাইরয়েডিজম (Hypoparathyroidism): প্যারাথাইরয়েড হরমোনের অভাবজনিত ক্যালসিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে।

Associated Conditions

এটি দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ, সিলিয়াক ডিজিজ, এবং ক্রোন্স ডিজিজের মতো অবস্থায় ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং কিছু অটোইমিউন রোগের ঝুঁকি কমাতেও এর ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হয়।

বিরোধীতা এবং ব্ল্যাকবক্স সতর্কতা

যাদের রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বেশি (হাইপারক্যালসেমিয়া), ভিটামিন ডি টক্সিসিটি বা এর প্রতি অতিসংবেদনশীলতা আছে, তাদের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা যাবে না। এই সাপ্লিমেন্টের কোনো ব্ল্যাকবক্স সতর্কতা নেই।

ফার্মাকোডাইনামিক্স

কোলিক্যালসিফেরল নিজে সক্রিয় নয়। এটি লিভার ও কিডনিতে বিপাকিত হয়ে ক্যালসিট্রাইওল (Calcitriol) নামক সক্রিয় হরমোনে রূপান্তরিত হয়। ক্যালসিট্রাইওল অন্ত্রে ক্যালসিয়াম ও ফসফেট শোষণ বাড়ায়, কিডনিতে ক্যালসিয়াম পুনঃশোষণ বৃদ্ধি করে এবং হাড় থেকে ক্যালসিয়াম মোবিলাইজেশন নিয়ন্ত্রণ করে, যার মাধ্যমে রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা স্থিতিশীল থাকে।

কর্ম প্রক্রিয়া

ত্বকে তৈরি বা খাবার থেকে প্রাপ্ত কোলিক্যালসিফেরল প্রথমে লিভারে গিয়ে ক্যালসিফেডিওল (Calcifediol) বা 25-hydroxyvitamin D-তে রূপান্তরিত হয়। এরপর এটি কিডনিতে গিয়ে ক্যালসিট্রাইওল (Calcitriol) বা 1,25-dihydroxyvitamin D-তে রূপান্তরিত হয়। এই সক্রিয় ক্যালসিট্রাইওল কোষের ভিটামিন ডি রিসেপ্টরের (VDR) সাথে আবদ্ধ হয়ে নির্দিষ্ট জিনের প্রকাশকে নিয়ন্ত্রণ করে, যা ক্যালসিয়াম-বাইন্ডিং প্রোটিন তৈরি করে এবং অন্ত্র থেকে ক্যালসিয়াম শোষণ প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে।

মাত্রা

মাত্রা ব্যক্তি, বয়স এবং অভাবের তীব্রতার উপর নির্ভর করে।

• সাধারণ প্রতিরোধ: প্রতিদিন ৪০০-১,০০০ আইইউ (International Units)।
• অভাবের চিকিৎসা: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য সপ্তাহে ২০,০০০-৫০,০০০ আইইউ ৮ সপ্তাহের জন্য, এরপর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতিদিন ১,৫০০-২,০০০ আইইউ।
• অস্টিওপোরোসিস: প্রতিদিন ৮০০-১,০০০ আইইউ, ক্যালসিয়ামের সাথে।

সেবনবিধি

ক্যাপসুল বা ট্যাবলেটটি একটি প্রধান খাবারের সাথে বা পরে গ্রহণ করুন, কারণ চর্বিযুক্ত খাবার এর শোষণ বাড়াতে সাহায্য করে। এটি পানি দিয়ে গিলে ফেলুন। যদি সাপ্তাহিক উচ্চ মাত্রার ডোজ গ্রহণ করেন, তবে প্রতি সপ্তাহে একটি নির্দিষ্ট দিনে এটি গ্রহণ করুন যাতে মনে রাখতে সুবিধা হয়। তরল ড্রপস সরাসরি মুখে বা কোনো পানীয় বা খাবারের সাথে মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে।

কাজ করতে কত সময় লাগে?

রক্তে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা বাড়তে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। হাড়ের স্বাস্থ্যের উপর এর প্রভাব বা অস্টিওআর্থ্রাইটিসের মতো উপসর্গের উন্নতি লক্ষ্য করতে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

শোষণ

এটি একটি চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন হওয়ায়, ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে এর শোষণের জন্য পিত্তরসের (bile) প্রয়োজন হয়। প্রায় ৮০% কোলিক্যালসিফেরল খাবার থেকে শোষিত হয়।

বিতরণের পরিমাণ

শোষিত হওয়ার পর, এটি শরীরের চর্বিযুক্ত টিস্যু (adipose tissue) এবং পেশীতে জমা হয়, যা পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য একটি ভান্ডার হিসেবে কাজ করে।

প্রোটিন বাইন্ডিং

রক্তে প্রায় ৮৫-৯০% কোলিক্যালসিফেরল এবং এর মেটাবোলাইটগুলো ভিটামিন ডি-বাইন্ডিং প্রোটিন (VDBP)-এর সাথে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকে।

বিপাক

এটি লিভারে 25-hydroxylase এনজাইম দ্বারা ক্যালসিফেডিওলে এবং পরে কিডনিতে 1-alpha-hydroxylase এনজাইম দ্বারা ক্যালসিট্রাইওলে বিপাকিত হয়।

অর্ধ জীবন

রক্তে এর প্রধান সঞ্চালিত রূপ, ক্যালসিফেডিওল (25-hydroxyvitamin D)-এর অর্ধ-জীবন প্রায় ১৫-২০ দিন, যা শরীরের ভিটামিন ডি-এর অবস্থা নির্দেশ করে।

নির্মূল

এটি প্রধানত পিত্তরসের মাধ্যমে মলের সাথে নির্গত হয়। খুব সামান্য পরিমাণ প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।

ঔষধের মিথস্ক্রিয়া

কর্টিকোস্টেরয়েড (যেমন: প্রেডনিসোন) ক্যালসিয়াম শোষণ কমিয়ে দেয় এবং ভিটামিন ডি বিপাক বাড়িয়ে দেয়। কিছু খিঁচুনির ঔষধ (যেমন: ফেনোবারবিটাল, ফেনিটোইন) এবং ওজন কমানোর ঔষধ অরলিস্ট্যাট এর শোষণ এবং কার্যকারিতা কমাতে পারে। থায়াজাইড ডাইইউরেটিকসের সাথে ব্যবহারে হাইপারক্যালসেমিয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

রোগ মিথস্ক্রিয়া

যাদের সারকয়ডোসিস (Sarcoidosis), যক্ষ্মা, বা লিম্ফোমার মতো গ্রানুলোমেটাস রোগ আছে, তাদের ক্ষেত্রে হাইপারক্যালসেমিয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে। দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ এবং হাইপারপ্যারাথাইরয়েডিজমের রোগীদের ক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা উচিত।

খাদ্য মিথস্ক্রিয়া

এর কোনো উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক খাদ্য মিথস্ক্রিয়া নেই। বরং, চর্বিযুক্ত খাবারের সাথে গ্রহণ করলে এর শোষণ বৃদ্ধি পায়।

ব্যবহারের দিকনির্দেশনা

উচ্চ মাত্রায় সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করার সময় রক্তে ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়ামের মাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন। পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (যেমন: দুধ, দই, পনির) গ্রহণ করুন। আপনি যদি অন্য কোনো ঔষধ বা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করেন, তবে সম্ভাব্য মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কে নিশ্চিত হতে লেবেল পরীক্ষা করুন বা ফার্মাসিস্টের সাথে কথা বলুন।

প্রতিনির্দেশনা

হাইপারক্যালসেমিয়া (রক্তে ক্যালসিয়ামের উচ্চ মাত্রা), হাইপারভিটামিনোসিস ডি (ভিটামিন ডি-এর বিষাক্ততা) এবং কিডনিতে পাথর হওয়ার গুরুতর ইতিহাস থাকলে এটি ব্যবহার করা যাবে না।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

সঠিক মাত্রায় গ্রহণ করলে এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। তবে, অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করলে ক্ষুধা কমে যাওয়া, বমি বমি ভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া হতে পারে।

বিরূপ প্রভাব

অতিরিক্ত এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা অতিরিক্ত বেড়ে যেতে পারে (হাইপারক্যালসেমিয়া), যার ফলে কিডনিতে পাথর, রক্তনালীতে ক্যালসিয়াম জমা, কিডনির ক্ষতি, এবং হৃদযন্ত্রের সমস্যা হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় ব্যবহার

গর্ভাবস্থায় ভিটামিন ডি অপরিহার্য, কারণ এটি মা ও শিশু উভয়ের হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজন। তবে, অতিরিক্ত মাত্রা গ্রহণ করলে তা শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। দৈনিক প্রস্তাবিত মাত্রা (সাধারণত ৬০০-৮০০ আইইউ) নিরাপদ।

স্তন্যদানকালে ব্যবহার

এটি বুকের দুধে নিঃসৃত হয়। মায়ের পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি গ্রহণ শিশুর চাহিদা পূরণে সাহায্য করে। তবে মায়ের উচ্চ মাত্রার সাপ্লিমেন্ট শিশুর মধ্যে হাইপারক্যালসেমিয়ার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

বিষাক্ততা

ভিটামিন ডি বিষাক্ততা বা হাইপারভিটামিনোসিস ডি তখনই ঘটে যখন রক্তে এর মাত্রা अत्यधिक বেড়ে যায়। এটি সাধারণত দীর্ঘ সময় ধরে খুব উচ্চ মাত্রার (দৈনিক ১০,০০০ আইইউ-এর বেশি) সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের ফলে হয়, সূর্যের আলো থেকে হয় না।

সতর্কতা

কিডনি রোগ, হৃদরোগ, বা সারকয়ডোসিসের মতো রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে রক্তে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি-এর মাত্রা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা আবশ্যক।

মাত্রাধিক্যতা

মাত্রাধিক্যতার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে তীব্র বমি বমি ভাব, বমি, দুর্বলতা, ঘন ঘন প্রস্রাব, মানসিক বিভ্রান্তি এবং কিডনির সমস্যা।

বিপরীত

এর কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষেধক নেই। মাত্রাধিক্যতার চিকিৎসায় সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ বন্ধ করা, ক্যালসিয়ামবিহীন খাবার গ্রহণ, প্রচুর পরিমাণে তরল পান করা এবং গুরুতর ক্ষেত্রে কর্টিকোস্টেরয়েড বা বিসফসফোনেটের মতো ঔষধ ব্যবহার করা হয়।

সংরক্ষণ

এটি একটি শীতল, শুষ্ক স্থানে, সরাসরি সূর্যালোক এবং তাপ থেকে দূরে সংরক্ষণ করুন। শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন।