Risperidon Ratiopharm

সারসংক্ষেপ

রিসপেরিডোন (Risperidon Ratiopharm) একটি অ্যাটিপিক্যাল অ্যান্টিসাইকোটিক ঔষধ যা সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিসঅর্ডার এবং অটিজমের সাথে সম্পর্কিত খিটখিটে আচরণের মতো বিভিন্ন মানসিক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি মস্তিষ্কের দুটি গুরুত্বপূর্ণ নিউরোট্রান্সমিটার—ডোপামিন এবং সেরোটোনিন—এর কার্যকলাপে ভারসাম্য এনে কাজ করে। এটি ট্যাবলেট, মুখে খাওয়ার তরল দ্রবণ এবং দীর্ঘ সময় কার্যকর ইনজেকশন হিসেবে পাওয়া যায়। এই ঔষধটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু গুরুতর ঝুঁকি রয়েছে, তাই এটি নিবিড় পর্যবেক্ষণের অধীনে ব্যবহার করা আবশ্যক।

ব্যাকগ্রাউন্ড

রিসপেরিডোন ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে জ্যানসেন ফার্মাসিউটিকা (Janssen Pharmaceutica) দ্বারা বিকশিত হয় এবং ১৯৯৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের FDA কর্তৃক অনুমোদিত হয়। এটি প্রথম দিকের অ্যাটিপিক্যাল অ্যান্টিসাইকোটিকগুলোর মধ্যে অন্যতম, যা পুরনো বা টিপিক্যাল অ্যান্টিসাইকোটিকের তুলনায় ভিন্ন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রোফাইল প্রদান করে, বিশেষ করে নড়াচড়া সম্পর্কিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (extrapyramidal symptoms) কমিয়ে আনে।

ইঙ্গিত

রিসপেরিডোন নিম্নলিখিত রোগগুলোর চিকিৎসার জন্য নির্দেশিত:

• সিজোফ্রেনিয়া (Schizophrenia): প্রাপ্তবয়স্ক এবং কিশোর-কিশোরীদের সিজোফ্রেনিয়ার চিকিৎসার জন্য।
• বাইপোলার ডিসঅর্ডার (Bipolar Disorder): বাইপোলার I ডিসঅর্ডারের তীব্র ম্যানিক বা মিশ্র পর্বের চিকিৎসার জন্য, একা অথবা লিথিয়াম বা ভ্যালপ্রোয়েটের সাথে একত্রে।
• অটিস্টিক ডিসঅর্ডার: অটিজমের সাথে সম্পর্কিত খিটখিটে আচরণ, যেমন আগ্রাসন, নিজেকে আঘাত করা এবং হঠাৎ মেজাজ পরিবর্তন, নিয়ন্ত্রণের জন্য।

Associated Conditions

এটি কখনও কখনও ট্যুরেট সিনড্রোম (Tourette syndrome), অবসেসিভ-কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার (OCD) এবং ডিমেনশিয়ার সাথে সম্পর্কিত তীব্র অ্যাজিটেশন বা অস্থিরতার চিকিৎসায় অফ-লেবেল (অননুমোদিত) হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

বিরোধীতা এবং ব্ল্যাকবক্স সতর্কতা

যাদের রিসপেরিডোন বা এর কোনো উপাদানের প্রতি অতিসংবেদনশীলতা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা যাবে না।
ব্ল্যাকবক্স সতর্কতা: FDA এই ঔষধের জন্য একটি গুরুতর সতর্কতা জারি করেছে। ডিমেনশিয়া-সম্পর্কিত সাইকোসিসে আক্রান্ত বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে রিসপেরিডোন ব্যবহারে মৃত্যুহার বৃদ্ধি পায়। তাই, এই ধরনের রোগীদের চিকিৎসার জন্য এটি অনুমোদিত নয়।

ফার্মাকোডাইনামিক্স

রিসপেরিডোন সেরোটোনিন (5-HT2A) এবং ডোপামিন (D2) রিসেপ্টর উভয়েরই একটি শক্তিশালী অ্যান্টাগনিস্ট। এটি আলফা-১ এবং আলফা-২ অ্যাড্রেনার্জিক এবং H1 হিস্টামিনার্জিক রিসেপ্টরের উপরও অ্যান্টাগনিস্ট হিসেবে কাজ করে, যা এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (যেমন: মাথা ঘোরা, ঘুম ঘুম ভাব) ব্যাখ্যা করে।

কর্ম প্রক্রিয়া

এর অ্যান্টিসাইকোটিক প্রভাব মূলত ডোপামিন D2 এবং সেরোটোনিন 5-HT2A রিসেপ্টরকে ব্লক করার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। ডোপামিন রিসেপ্টরকে ব্লক করা সিজোফ্রেনিয়ার ‘পজিটিভ’ উপসর্গ (যেমন: হ্যালুসিনেশন, ডিলিউশন) নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। অন্যদিকে, সেরোটোনিন রিসেপ্টরকে ব্লক করা ‘নেগেটিভ’ উপসর্গ (যেমন: আবেগহীনতা, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা) উন্নত করতে এবং এক্সট্রাপিরামিডাল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (নড়াচড়া সম্পর্কিত সমস্যা) কমাতে সহায়ক হতে পারে।

মাত্রা

মাত্রা রোগীর অবস্থা, বয়স এবং লিভার/কিডনির কার্যকারিতার উপর নির্ভর করে।

• সিজোফ্রেনিয়া (প্রাপ্তবয়স্ক): সাধারণত প্রতিদিন ২ মিলিগ্রাম দিয়ে শুরু করা হয়, যা ধীরে ধীরে প্রয়োজন অনুযায়ী ৪-৬ মিলিগ্রাম পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে।
• বাইপোলার ম্যানিয়া: প্রতিদিন ২-৩ মিলিগ্রাম দিয়ে শুরু করা হয়।
• অটিজমের খিটখিটে ভাব: রোগীর ওজনের উপর ভিত্তি করে খুব কম মাত্রা দিয়ে শুরু করা হয়।

সেবনবিধি

ট্যাবলেটটি খাবারের সাথে বা খাবার ছাড়াও গ্রহণ করা যায়। এটি পানি দিয়ে সম্পূর্ণ গিলে ফেলুন। যদি মুখে খাওয়ার তরল দ্রবণ ব্যবহার করেন, তবে সঠিক মাত্রা পরিমাপের জন্য সাথে থাকা ড্রপারটি ব্যবহার করুন। এই তরলটি পানি, জুস বা দুধের সাথে মেশানো যেতে পারে, তবে চা বা কোলার সাথে মেশানো উচিত নয়। যদি মুখে দ্রবীভূত হওয়ার ট্যাবলেট (orally disintegrating tablet) ব্যবহার করেন, তবে শুকনো হাতে ট্যাবলেটটি ধরে জিহ্বার উপর রাখুন এবং এটি গলে যাওয়ার পর গিলে ফেলুন, পানির প্রয়োজন নেই।

কাজ করতে কত সময় লাগে?

কিছু উপসর্গের উন্নতি প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই দেখা যেতে পারে, তবে সম্পূর্ণ থেরাপিউটিক প্রভাব পেতে সাধারণত ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

শোষণ

মুখে সেবনের পর রিসপেরিডোন ভালোভাবে শোষিত হয়। খাবার এর শোষণে তেমন কোনো প্রভাব ফেলে না।

বিতরণের পরিমাণ

এর বিতরণের পরিমাণ (Volume of distribution) প্রায় ১-২ লিটার/কেজি।

প্রোটিন বাইন্ডিং

রিসপেরিডোন এবং এর সক্রিয় মেটাবোলাইট (9-hydroxyrisperidone) উভয়ই প্লাজমা প্রোটিনের সাথে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকে (প্রায় ৯০% এবং ৭৭%)।

বিপাক

এটি প্রধানত লিভারে CYP2D6 এনজাইমের মাধ্যমে এর প্রধান সক্রিয় মেটাবোলাইট, ৯-হাইড্রক্সিরিসপেরিডোনে (প্যালিপেরিডোন) রূপান্তরিত হয়, যার কার্যকারিতা রিসপেরিডোনের মতোই।

অর্ধ জীবন

রিসপেরিডোন এবং এর সক্রিয় মেটাবোলাইট একত্রে (অ্যাক্টিভ ময়েটি) এর অর্ধ-জীবন প্রায় ২০-২৪ ঘন্টা।

নির্মূল

এর প্রায় ৭০% প্রস্রাবের মাধ্যমে এবং প্রায় ১৪% মলের মাধ্যমে শরীর থেকে নির্গত হয়।

ঔষধের মিথস্ক্রিয়া

কিছু অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট (যেমন: ফ্লুক্সেটিন, প্যারোক্সেটিন) রিসপেরিডোনের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। কার্বামাজেপিনের মতো খিঁচুনির ঔষধ এর মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। অ্যালকোহল বা অন্যান্য কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উপর কার্যকর ঔষধের সাথে এটি গ্রহণ করলে ঘুম ঘুম ভাব এবং অন্যান্য প্রভাব তীব্রতর হতে পারে।

রোগ মিথস্ক্রিয়া

হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, পারকিনসন্স ডিজিজ বা খিঁচুনির ইতিহাস থাকলে এটি সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা উচিত। এটি রক্তচাপ কমাতে পারে, যা অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন (হঠাৎ দাঁড়ানো বা বসা থেকে উঠলে মাথা ঘোরা) সৃষ্টি করতে পারে।

খাদ্য মিথস্ক্রিয়া

এটি খাবারের সাথে বা খাবার ছাড়া গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে, এই ঔষধ গ্রহণকালে অ্যালকোহল পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত।

ব্যবহারের দিকনির্দেশনা

আপনার যদি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, খিঁচুনি, পারকিনসন্স ডিজিজ, বা রক্তে শ্বেতকণিকার পরিমাণ কম থাকার ইতিহাস থাকে, তবে চিকিৎসা শুরুর আগে চিকিৎসককে জানান। যেকোনো অস্বাভাবিক বা অনিয়ন্ত্রিত পেশী সঞ্চালনের (বিশেষ করে মুখ বা জিহ্বায়) বিষয়ে সতর্ক থাকুন। এই ঔষধটি ওজন বৃদ্ধি, রক্তে শর্করা এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে পারে, তাই নিয়মিত ওজন, ব্লাড সুগার এবং লিপিড প্রোফাইল পর্যবেক্ষণ করা আবশ্যক। গরম আবহাওয়ায় শরীর অতিরিক্ত গরম হওয়া বা পানিশূন্যতা এড়াতে সতর্ক থাকুন।

প্রতিনির্দেশনা

রিসপেরিডোনের প্রতি পরিচিত অতিসংবেদনশীলতা থাকলে এটি ব্যবহার করা যাবে না। ডিমেনশিয়া-সম্পর্কিত সাইকোসিসে আক্রান্ত বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে এটি কঠোরভাবে প্রতিনির্দেশিত।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে ঘুম ঘুম ভাব, মাথা ঘোরা, ওজন বৃদ্ধি, ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া, মুখে লালা আসা, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন। এছাড়া, এক্সট্রাপিরামিডাল উপসর্গ (যেমন: কাঁপুনি, পেশী শক্ত হয়ে যাওয়া, অস্থিরতা) দেখা দিতে পারে।

বিরূপ প্রভাব

গুরুতর বিরূপ প্রভাবগুলোর মধ্যে রয়েছে টার্ডিভ ডিস্কিনেসিয়া (একটি স্থায়ী নড়াচড়া জনিত সমস্যা), নিউরোলেপটিক ম্যালিগন্যান্ট সিনড্রোম (জীবন-হুমকির কারণ হতে পারে এমন একটি প্রতিক্রিয়া), ডায়াবেটিস, এবং হাইপারপ্রোল্যাকটিনেমিয়া (প্রোল্যাকটিন হরমোন বৃদ্ধি, যা স্তন বৃদ্ধি বা মাসিক অনিয়মিত করতে পারে)।

গর্ভাবস্থায় ব্যবহার

গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাসে এই ঔষধ গ্রহণ করলে নবজাতকের মধ্যে এক্সট্রাপিরামিডাল এবং উইথড্রয়াল উপসর্গ (যেমন: কাঁপুনি, শ্বাসকষ্ট, খাওয়ানোতে অসুবিধা) দেখা দিতে পারে। তাই, সম্ভাব্য ঝুঁকির চেয়ে উপকারিতা বেশি বিবেচিত হলেই কেবল এটি ব্যবহার করা উচিত।

স্তন্যদানকালে ব্যবহার

রিসপেরিডোন মায়ের বুকের দুধে নিঃসৃত হয়। শিশুর উপর এর সম্ভাব্য প্রভাবের কারণে, ঔষধ গ্রহণকালে স্তন্যপান বন্ধ রাখা বা ঔষধ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যা মায়ের জন্য ঔষধটির গুরুত্ব বিবেচনা করে করা হয়।

বিষাক্ততা

অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করলে তীব্র ঘুম, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, রক্তচাপ কমে যাওয়া এবং গুরুতর এক্সট্রাপিরামিডাল উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

সতর্কতা

এই ঔষধটি বিচার, চিন্তাভাবনা বা নড়াচড়ার দক্ষতা হ্রাস করতে পারে, তাই গাড়ি চালানো বা ভারী যন্ত্রপাতি পরিচালনার সময় সতর্কতা অবলম্বন করুন। রক্তে শ্বেতকণিকার সংখ্যা কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকায়, সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিলে সতর্ক থাকুন।

মাত্রাধিক্যতা

মাত্রাধিক্যতার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে তীব্র তন্দ্রা, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি, নিম্ন রক্তচাপ এবং গুরুতর পেশী সঞ্চালন সমস্যা। এর ব্যবস্থাপনা মূলত সহায়ক ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল।

বিপরীত

এর কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষেধক (antidote) নেই। চিকিৎসা সহায়ক ব্যবস্থার মাধ্যমে করা হয়, যেমন শ্বাসনালী খোলা রাখা, অক্সিজেন সরবরাহ এবং হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ।

সংরক্ষণ

ঔষধটি ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায়, আলো এবং আর্দ্রতা থেকে দূরে রাখুন। শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন।