Sulfazine EC

সারসংক্ষেপ

সালফাসালাজিন (Sulfazine EC) একটি প্রদাহ-বিরোধী ঔষধ যা প্রধানত ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ (IBD), যেমন আলসারেটিভ কোলাইটিস ও ক্রোন্স ডিজিজ, এবং রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি একটি ডিজিজ-মডিফাইং অ্যান্টিরিউম্যাটিক ড্রাগ (DMARD) হিসেবে কাজ করে, যা শরীরের প্রদাহ প্রক্রিয়াকে দমন করে। এটি সালফাপিরিডিন এবং ৫-অ্যামিনোসালিসিলিক অ্যাসিড (5-ASA) নামক দুটি উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত, যা অন্ত্রের মধ্যে ভেঙে গিয়ে কাজ করে।

ব্যাকগ্রাউন্ড

সালফাসালাজিন ১৯৩০-এর দশকে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসার জন্য আবিষ্কৃত হয়েছিল। বিজ্ঞানী ন্যানা স্বার্টজ (Nanna Svartz) বিশ্বাস করতেন যে এই রোগের কারণ একটি জীবাণু এবং তিনি একটি সালফা ড্রাগ (সালফাপিরিডিন) এবং একটি প্রদাহ-বিরোধী ঔষধ (স্যালিসিলিক অ্যাসিড) একত্রিত করে এটি তৈরি করেন। পরবর্তীতে দেখা যায় যে এটি আলসারেটিভ কোলাইটিসের চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকর।

ইঙ্গিত

সালফাসালাজিন নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য নির্দেশিত:

  • আলসারেটিভ কোলাইটিস (Ulcerative Colitis): মাঝারি থেকে তীব্র আলসারেটিভ কোলাইটিসের চিকিৎসা এবং রোগের পুনরায় আক্রমণ প্রতিরোধ করতে।
  • রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (Rheumatoid Arthritis): প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুদের (জুভেনাইল রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস) রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসায়, বিশেষ করে যখন অন্যান্য ঔষধে কাজ হয় না।
  • ক্রোন্স ডিজিজ (Crohn's Disease): এই রোগের চিকিৎসায়ও এটি ব্যবহৃত হয়, তবে আলসারেটিভ কোলাইটিসের ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা বেশি প্রমাণিত।

Associated Conditions

এটি কখনও কখনও সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিস এবং অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিসের মতো অন্যান্য প্রদাহজনিত রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

বিরোধীতা এবং ব্ল্যাকবক্স সতর্কতা

যাদের সালফোনামাইড (সালফা ড্রাগ) বা স্যালিসিলেট (যেমন: অ্যাসপিরিন) এর প্রতি গুরুতর অ্যালার্জি রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা যাবে না। অন্ত্র বা মূত্রনালীতে প্রতিবন্ধকতা (obstruction) এবং পোরফাইরিয়া (porphyria) নামক বিরল রক্তের রোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রেও এটি প্রতিনির্দেশিত। এর কোনো নির্দিষ্ট ব্ল্যাকবক্স সতর্কতা নেই।

ফার্মাকোডাইনামিক্স

সালফাসালাজিন শরীরে প্রবেশ করার পর এর দুটি মূল উপাদান, সালফাপিরিডিন এবং ৫-অ্যামিনোসালিসিলিক অ্যাসিড (মেসালামিন) এ ভেঙে যায়। ৫-অ্যামিনোসালিসিলিক অ্যাসিড প্রধানত অন্ত্রের প্রদাহ কমায়, যা আলসারেটিভ কোলাইটিসের চিকিৎসায় কাজ করে। অন্যদিকে, সালফাপিরিডিন সিস্টেমিক প্রদাহ-বিরোধী এবং ইমিউনোমডুলেটরি প্রভাব ফেলে, যা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসায় কার্যকর। এটি প্রোস্টাগ্লান্ডিন এবং লিউকোট্রিয়েনের মতো প্রদাহ সৃষ্টিকারী পদার্থের উৎপাদনকে বাধা দেয়।

কর্ম প্রক্রিয়া

মুখে সেবনের পর, সালফাসালাজিনের একটি ছোট অংশ ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে শোষিত হয়। এর বড় অংশটি কোলনে পৌঁছায়, যেখানে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া এটিকে সালফাপিরিডিন এবং ৫-অ্যামিনোসালিসিলিক অ্যাসিড (5-ASA)-এ ভেঙে দেয়। 5-ASA কোলনের দেয়ালে স্থানীয়ভাবে কাজ করে এবং সাইক্লোঅক্সিজিনেজ (COX) ও লিপোক্সিজিনেজ (LOX) এনজাইমকে বাধা দিয়ে প্রদাহ কমায়। সালফাপিরিডিন শোষিত হয়ে সিস্টেমিক প্রভাব ফেলে, যদিও এর সঠিক কার্যপ্রণালী সম্পূর্ণরূপে বোঝা যায়নি।

মাত্রা

  • আলসারেটিভ কোলাইটিস: শুরুতে প্রতিদিন ১ থেকে ৪ গ্রাম, যা কয়েকটি ডোজে ভাগ করে নেওয়া হয়। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সাধারণত প্রতিদিন ২ গ্রাম।
  • রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস: সাধারণত প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রাম বা ১ গ্রাম দিয়ে শুরু করা হয় এবং ধীরে ধীরে মাত্রা বাড়িয়ে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ গ্রাম পর্যন্ত করা হয়।

সেবনবিধি

ট্যাবলেটটি প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে, খাবারের ঠিক পরে এবং এক গ্লাস পানি দিয়ে সম্পূর্ণ গিলে ফেলুন। এটি পেটের অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করবে। দিনের ডোজগুলোকে সমানভাবে ভাগ করে নিন (যেমন: সকাল ও সন্ধ্যায়)। এন্টারিক-কোটেড ট্যাবলেট ভাঙা, চিবানো বা গুঁড়ো করা যাবে না, কারণ এটি অন্ত্রে পৌঁছানোর আগেই ভেঙে যেতে পারে। পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল পান করুন (দৈনিক প্রায় ১.৫ থেকে ২ লিটার), এটি কিডনিতে পাথর হওয়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে।

কাজ করতে কত সময় লাগে?

আলসারেটিভ কোলাইটিসের ক্ষেত্রে কয়েক দিনের মধ্যে উন্নতি লক্ষ্য করা যেতে পারে। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের লক্ষণ উপশম হতে সাধারণত ৪ থেকে ১২ সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।

শোষণ

সালফাসালাজিনের প্রায় ৩০% ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে শোষিত হয়। বাকিটা কোলনে পৌঁছায়। এর বিপাকীয় উপাদান সালফাপিরিডিন ভালোভাবে শোষিত হয়, কিন্তু 5-ASA খুব কম পরিমাণে শোষিত হয়।

বিতরণের পরিমাণ

এটি শরীরের বিভিন্ন সংযোগকারী টিস্যু, তরল এবং সেরাস ফ্লুইডে ব্যাপকভাবে বিতরণ হয়।

প্রোটিন বাইন্ডিং

সালফাসালাজিন এবং সালফাপিরিডিন উভয়ই প্লাজমা প্রোটিনের সাথে উচ্চ মাত্রায় আবদ্ধ থাকে।

বিপাক

এটি কোলনে থাকা ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে সালফাপিরিডিন এবং 5-ASA-তে বিপাকিত হয়। সালফাপিরিডিন লিভারে আরও বিপাকিত হয়।

অর্ধ জীবন

সালফাসালাজিনের অর্ধ-জীবন প্রায় ৫ থেকে ১০ ঘন্টা। এর বিপাকীয় উপাদানগুলোর অর্ধ-জীবন ভিন্ন।

নির্মূল

5-ASA প্রধানত মলের মাধ্যমে এবং সালফাপিরিডিন ও এর মেটাবোলাইটগুলো কিডনির মাধ্যমে প্রস্রাবের সাথে নির্গত হয়।

ঔষধের মিথস্ক্রিয়া

এটি ডিগোক্সিন (Digoxin) এবং ফলিক অ্যাসিডের (Folic Acid) শোষণ কমাতে পারে। ওয়ারফারিনের (Warfarin) মতো রক্ত পাতলা করার ঔষধের প্রভাব বাড়িয়ে দিতে পারে। মেথোট্রেক্সেটের সাথে ব্যবহারে বমি বমি ভাব বাড়তে পারে।

রোগ মিথস্ক্রিয়া

গুরুতর কিডনি বা লিভারের রোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এটি সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা উচিত। G6PD ডেফিসিয়েন্সি নামক রক্তের জিনগত সমস্যা থাকলে এটি হেমোলাইসিস (রক্তকণিকা ভেঙে যাওয়া) ঘটাতে পারে।

খাদ্য মিথস্ক্রিয়া

এটি খাবারের সাথে গ্রহণ করলে হজমজনিত সমস্যা কমে। এটি ফলিক অ্যাসিডের শোষণকে বাধা দেয়, তাই অতিরিক্ত ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্টের প্রয়োজন হতে পারে।

ব্যবহারের দিকনির্দেশনা

এই ঔষধ গ্রহণকালে আপনার ত্বক এবং প্রস্রাব হলুদ-কমলা রঙের হতে পারে; এটি একটি স্বাভাবিক এবং নিরীহ প্রভাব। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন, যা কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমাবে। চিকিৎসা চলাকালীন নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা (সম্পূর্ণ রক্তকণিকা গণনা) এবং লিভার ও কিডনির কার্যকারিতা পরীক্ষা করা আবশ্যক, কারণ এটি রক্তকণিকার সংখ্যা এবং অঙ্গের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করতে পারে। সংক্রমণের যেকোনো লক্ষণের (যেমন: জ্বর, গলা ব্যথা, অস্বাভাবিক ক্লান্তি) প্রতি সতর্ক থাকুন এবং এমনটা হলে অবিলম্বে চিকিৎসককে জানান।

প্রতিনির্দেশনা

সালফা ড্রাগ বা স্যালিসিলেটের প্রতি গুরুতর অ্যালার্জি, পোরফাইরিয়া, এবং অন্ত্র বা মূত্রনালীতে প্রতিবন্ধকতা থাকলে এটি ব্যবহার করা যাবে না।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে ক্ষুধামন্দা, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, পেটের অস্বস্তি এবং ত্বকে র‍্যাশ।

বিরূপ প্রভাব

গুরুতর বিরূপ প্রভাবগুলোর মধ্যে রয়েছে স্টিভেনস-জনসন সিনড্রোম (SJS) এর মতো গুরুতর ত্বকের প্রতিক্রিয়া, রক্তকণিকার সংখ্যা মারাত্মকভাবে কমে যাওয়া (agranulocytosis, aplastic anemia), লিভারের ক্ষতি, এবং ফুসফুসের প্রদাহ। এটি পুরুষদের মধ্যে শুক্রাণুর সংখ্যা সাময়িকভাবে কমাতে পারে, যা সাধারণত ঔষধ বন্ধ করার পর স্বাভাবিক হয়ে যায়।

গর্ভাবস্থায় ব্যবহার

এটি গর্ভাবস্থায় তুলনামূলকভাবে নিরাপদ বলে মনে করা হয়, তবে এটি ফলিক অ্যাসিডের শোষণকে বাধা দেয়, যা ভ্রূণের বিকাশের জন্য অপরিহার্য। তাই, গর্ভবতী মহিলাদের অতিরিক্ত ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা আবশ্যক।

স্তন্যদানকালে ব্যবহার

সালফাসালাজিন অল্প পরিমাণে মায়ের বুকের দুধে নিঃসৃত হয় এবং কিছু ক্ষেত্রে শিশুর মধ্যে ডায়রিয়া বা র‍্যাশ ঘটাতে পারে। তাই, স্তন্যদানকালে এটি ব্যবহারের আগে ঝুঁকি এবং উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা উচিত।

বিষাক্ততা

অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করলে হজমজনিত সমস্যা, কিডনির সমস্যা এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

সতর্কতা

অ্যাজমা, অ্যালার্জি বা G6PD ডেফিসিয়েন্সির ইতিহাস থাকলে সতর্ক থাকুন। চিকিৎসা শুরুর আগে এবং চলাকালীন রক্ত পরীক্ষা করা জরুরি।

মাত্রাধিক্যতা

মাত্রাধিক্যতার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে বমি, পেটে ব্যথা, তন্দ্রা এবং খিঁচুনি। এক্ষেত্রে অবিলম্বে চিকিৎসা সহায়তা প্রয়োজন।

বিপরীত

এর কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষেধক (antidote) নেই। চিকিৎসা মূলত সহায়ক ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল, যেমন শরীর থেকে ঔষধ বের করে দেওয়ার জন্য তরল প্রদান করা।

সংরক্ষণ

ঔষধটি ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায়, আলো থেকে দূরে এবং শুষ্ক স্থানে রাখুন। শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন।

ব্যবহার

ক্রোনস ডিজিজ (সিডি), পলিআর্টিকুলার জুভেনাইল রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, দীর্ঘস্থায়ী বা অনির্দিষ্ট, প্রক্টাইটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, গুরুতর আলসারেটিভ কোলাইটিস, হালকা আলসারেটিভ কোলাইটিস, মাঝারি আলসারেটিভ কোলাইটিস

Sulfazine EC এর দাম কত? Sulfazine EC এর দাম

Sulfazine EC in Bangla
Sulfazine EC in bangla
বাণিজ্যিক নাম Sulfazine EC
জেনেরিক Sulfasalazine
ধরণ Oral
পরিমাপ
দাম
চিকিৎসাগত শ্রেণি
উৎপাদনকারী
উপলভ্য দেশ United States
সর্বশেষ সম্পাদনা January 7, 2025 at 1:49 am

খাওয়ার নিয়ম / ব্যবহারের নিয়ম

Sulfazine EC খাওয়ার নিয়ম / ব্যবহারের নিয়ম

আরো বিস্তারিত দেখুন Sulfazine EC

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

সতর্কতা

মিথস্ক্রিয়া

গর্ভাবস্থাকালীন ব্যবহার

বৈপরীত্য

অতিরিক্ত সতর্কতা

তীব্র ওভারডোজ

অন্যান্য ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া

সংরক্ষণ

*** Taking medicines without doctor's advice can cause long-term problems.
Share