Tolin 4 mg Tablet

সারসংক্ষেপ

সালবুটামল (Tolin 4 mg Tablet), যা অ্যালবিউটেরল (Albuterol) নামেও পরিচিত, একটি দ্রুত কার্যকরী ব্রঙ্কোডাইলেটর (শ্বাসনালী প্রসারক) ঔষধ। এটি প্রধানত অ্যাজমা (হাঁপানি) এবং ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD) এর মতো ফুসফুসের রোগে শ্বাসনালী সংকুচিত হয়ে যাওয়ার কারণে সৃষ্ট শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ এবং সাঁসাঁ শব্দ (wheezing) দ্রুত উপশম করতে ব্যবহৃত হয়। এটি বিটা-২ অ্যাড্রেনার্জিক অ্যাগোনিস্ট শ্রেণীর অন্তর্গত এবং এটি শ্বাসনালীর পেশীকে শিথিল করে কাজ করে, যার ফলে বায়ু চলাচল সহজ হয়। এটি ইনহেলার, নেবুলাইজার সলিউশন, ট্যাবলেট এবং সিরাপ হিসেবে পাওয়া যায়।

ব্যাকগ্রাউন্ড

সালবুটামল ১৯৬৬ সালে যুক্তরাজ্যে প্রথম আবিষ্কৃত হয় এবং ১৯৬৯ সাল থেকে চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি অ্যাজমার তীব্র আক্রমণের চিকিৎসায় একটি যুগান্তকারী ঔষধ হিসেবে আবির্ভূত হয় কারণ এটি দ্রুত কাজ করে এবং এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পূর্ববর্তী ঔষধগুলোর তুলনায় কম ছিল। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অপরিহার্য ঔষধের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত, যা একটি মৌলিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় সবচেয়ে নিরাপদ এবং কার্যকর ঔষধগুলোর অন্যতম।

ইঙ্গিত

সালবুটামল নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য নির্দেশিত:

• ব্রঙ্কোস্পাজম (Bronchospasm): অ্যাজমা এবং COPD-এর কারণে সৃষ্ট শ্বাসনালীর তীব্র সংকোচন বা ব্রঙ্কোস্পাজমের দ্রুত উপশমের জন্য।
• ব্যায়াম-জনিত ব্রঙ্কোস্পাজম প্রতিরোধ: ব্যায়াম করার আগে শ্বাসনালী সংকুচিত হওয়া প্রতিরোধ করতে।
• হাইপারক্যালেমিয়া: জরুরী অবস্থায় রক্তে পটাসিয়ামের উচ্চ মাত্রা কমাতে এটি ব্যবহৃত হতে পারে।

Associated Conditions

অ্যাজমা এবং COPD ছাড়াও, এটি কখনও কখনও অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া বা অন্যান্য ফুসফুসের রোগের কারণে সৃষ্ট তীব্র শ্বাসকষ্টের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

বিরোধীতা এবং ব্ল্যাকবক্স সতর্কতা

যাদের সালবুটামল বা এর কোনো উপাদানের প্রতি গুরুতর অতিসংবেদনশীলতা বা অ্যালার্জি রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা যাবে না। হৃদরোগের কিছু গুরুতর অবস্থায়, যেমন টাকাইঅ্যারিথমিয়া (দ্রুত হৃদস্পন্দন), এটি ব্যবহারে সতর্কতা প্রয়োজন। এর কোনো নির্দিষ্ট ব্ল্যাকবক্স সতর্কতা নেই।

ফার্মাকোডাইনামিক্স

সালবুটামল একটি সিলেক্টিভ বিটা-২ অ্যাড্রেনার্জিক রিসেপ্টর অ্যাগোনিস্ট। এটি শ্বাসনালীর মসৃণ পেশীতে থাকা বিটা-২ রিসেপ্টরকে উদ্দীপিত করে। এর ফলে অ্যাডিনাইল সাইক্লেজ নামক এনজাইম সক্রিয় হয়, যা ATP থেকে সাইক্লিক এএমপি (cAMP) তৈরি বাড়িয়ে দেয়। cAMP-এর মাত্রা বৃদ্ধি পেলে প্রোটিন কাইনেজ এ (PKA) সক্রিয় হয়, যা মায়োসিন লাইট-চেইন ফসফোরাইলেশনকে বাধা দেয় এবং ক্যালসিয়ামের ঘনত্ব কমিয়ে দেয়, যার চূড়ান্ত ফল হলো শ্বাসনালীর পেশী শিথিল হওয়া বা ব্রঙ্কোডাইলেশন।

কর্ম প্রক্রিয়া

সালবুটামল ফুসফুসের শ্বাসনালীর (bronchi এবং bronchioles) মসৃণ পেশীতে অবস্থিত বিটা-২ অ্যাড্রেনার্জিক রিসেপ্টরকে সরাসরি উদ্দীপিত করে। এই উদ্দীপনার ফলে পেশীগুলো শিথিল হয় এবং শ্বাসনালী প্রসারিত হয়। এটি ফুসফুসে বায়ু চলাচল বাড়িয়ে তোলে, যা শ্বাসকষ্ট থেকে দ্রুত মুক্তি দেয়। এটি হিস্টামিনের মতো প্রদাহ সৃষ্টিকারী উপাদানের নিঃসরণ কমাতেও কিছুটা সাহায্য করে।

মাত্রা

মাত্রা ঔষধের ফর্ম এবং রোগীর বয়স ও অবস্থার উপর নির্ভর করে।

• ইনহেলার (প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশু): প্রয়োজন অনুযায়ী ১-২ পাফ (১০০-২০০ মাইক্রোগ্রাম)। ২৪ ঘন্টায় ৮ পাফের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়।
• নেবুলাইজার সলিউশন: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২.৫ থেকে ৫ মিলিগ্রাম, প্রয়োজন অনুযায়ী দিনে ৪ বার পর্যন্ত।
• ট্যাবলেট/সিরাপ: এটি এখন আর তেমন ব্যবহৃত হয় না কারণ এর সিস্টেমিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি।

সেবনবিধি

ইনহেলার ব্যবহারের নিয়ম:
১. ব্যবহারের আগে ইনহেলারটি ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিন।
২. মুখ থেকে সম্পূর্ণভাবে শ্বাস ছাড়ুন।
৩. মাউথপিসটি মুখের মধ্যে নিয়ে ঠোঁট দিয়ে ভালোভাবে আটকে দিন।
৪. ইনহেলারের ক্যানিস্টারে চাপ দেওয়ার সাথে সাথেই মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে এবং গভীরভাবে শ্বাস নিন।
৫. শ্বাস নেওয়ার পর প্রায় ১০ সেকেন্ড শ্বাস ধরে রাখুন বা যতক্ষণ স্বাচ্ছন্দ্যে পারেন।
৬. ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। যদি আরেকটি পাফের প্রয়োজন হয়, তবে ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট অপেক্ষা করে একই পদ্ধতি অনুসরণ করুন।
৭. ব্যবহারের পর মাউথপিসে ক্যাপটি লাগিয়ে রাখুন।

কাজ করতে কত সময় লাগে?

ইনহেলার ব্যবহারের পর এর কার্যকারিতা খুব দ্রুত শুরু হয়, সাধারণত ৫ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে। এর সর্বোচ্চ প্রভাব ৩০ থেকে ৯০ মিনিটের মধ্যে পাওয়া যায় এবং এটি প্রায় ৪ থেকে ৬ ঘন্টা স্থায়ী হয়।

শোষণ

ইনহেলারের মাধ্যমে নেওয়া ডোজের প্রায় ১০-২০% ফুসফুসে পৌঁছায় এবং বাকিটা মুখ ও গলায় জমা হয়ে গিলে ফেলা হয়। গিলে ফেলা অংশ পরিপাকতন্ত্র থেকে শোষিত হয়।

বিতরণের পরিমাণ

এর বিতরণের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি।

প্রোটিন বাইন্ডিং

সালবুটামল প্লাজমা প্রোটিনের সাথে খুব কম মাত্রায় (প্রায় ১০%) আবদ্ধ থাকে।

বিপাক

এটি প্রধানত লিভারে বিপাকিত হয়ে একটি নিষ্ক্রিয় সালফেটেড কনজুগেটে পরিণত হয়।

অর্ধ জীবন

এর এলিমিনেশন হাফ-লাইফ (অর্ধ-জীবন) প্রায় ৪ থেকে ৬ ঘন্টা।

নির্মূল

এটি প্রধানত কিডনির মাধ্যমে প্রস্রাবের সাথে অপরিবর্তিত এবং বিপাকিত উভয় রূপেই শরীর থেকে নির্গত হয়।

ঔষধের মিথস্ক্রিয়া

বিটা-ব্লকার (যেমন: প্রোপ্রানোলল), যা উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগের জন্য ব্যবহৃত হয়, সালবুটামলের কার্যকারিতাকে বাধা দিতে পারে এবং তীব্র ব্রঙ্কোস্পাজম ঘটাতে পারে। কিছু ডাইইউরেটিকস এবং কর্টিকোস্টেরয়েডের সাথে ব্যবহারে রক্তে পটাসিয়ামের মাত্রা কমে যাওয়ার (হাইপোক্যালেমিয়া) ঝুঁকি বাড়ে। কিছু অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট (যেমন: MAO ইনহিবিটরস, ট্রাইসাইক্লিক) এর সাথে ব্যবহারে হৃদযন্ত্রের উপর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে।

রোগ মিথস্ক্রিয়া

যাদের হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, হাইপারথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড হরমোনের আধিক্য), ডায়াবেটিস বা খিঁচুনির ইতিহাস আছে, তাদের ক্ষেত্রে এটি সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা উচিত। এটি হৃদস্পন্দন এবং রক্তচাপ বাড়াতে পারে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা পরিবর্তন করতে পারে।

খাদ্য মিথস্ক্রিয়া

ক্যাফেইন সমৃদ্ধ পানীয় (যেমন: চা, কফি, কোলা) এর উত্তেজক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (যেমন: হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি, কাঁপুনি) বাড়িয়ে দিতে পারে।

ব্যবহারের দিকনির্দেশনা

আপনার যদি হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপের ইতিহাস থাকে, তবে এই ঔষধ শুরু করার আগে চিকিৎসককে জানান। যদি আপনি লক্ষ্য করেন যে ঔষধটি আগের মতো কার্যকর হচ্ছে না বা আপনার ঘন ঘন ইনহেলার ব্যবহার করতে হচ্ছে (যেমন: সপ্তাহে ৩ বারের বেশি), তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন, কারণ এটি নির্দেশ করে যে আপনার অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে নেই। ব্যায়ামের ১৫-৩০ মিনিট আগে এটি ব্যবহার করলে ব্যায়াম-জনিত শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধ করা যায়।

প্রতিনির্দেশনা

সালবুটামলের প্রতি গুরুতর অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া বা হাইপারসেনসিটিভিটি থাকলে এটি ব্যবহার করা যাবে না।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে হাত বা শরীর কাঁপা (tremor), মাথাব্যথা, দ্রুত হৃদস্পন্দন (tachycardia), নার্ভাসনেস বা উদ্বেগ এবং পেশীতে ব্যথা।

বিরূপ প্রভাব

অত্যধিক ব্যবহারে প্যারাডক্সিক্যাল ব্রঙ্কোস্পাজম (ঔষধ ব্যবহারের পর শ্বাসনালী আরও সংকুচিত হওয়া), হাইপোক্যালেমিয়া (পটাসিয়ামের মাত্রা কমে যাওয়া) এবং কার্ডিয়াক অ্যারিথমিয়া (অনিয়মিত হৃদস্পন্দন) হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় ব্যবহার

গর্ভাবস্থায় এটি তুলনামূলকভাবে নিরাপদ বলে মনে করা হয় এবং অ্যাজমার তীব্র আক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য এটি অপরিহার্য। তবে, মায়ের উপকারিতা ভ্রূণের সম্ভাব্য ঝুঁকির চেয়ে বেশি বিবেচিত হলেই এটি ব্যবহার করা উচিত।

স্তন্যদানকালে ব্যবহার

সালবুটামল অল্প পরিমাণে মায়ের বুকের দুধে নিঃসৃত হয়, তবে এটি শিশুর জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করা হয় না। স্তন্যদানকালে এটি সাধারণত নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হয়।

বিষাক্ততা

অতিরিক্ত ব্যবহারে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো তীব্রতর হতে পারে, যেমন গুরুতর টাকাইকার্ডিয়া এবং হাইপোক্যালেমিয়া।

সতর্কতা

এটি একটি "রিলিভার" বা উপশমকারী ইনহেলার, প্রতিরোধক নয়। এটি শুধুমাত্র শ্বাসকষ্টের সময় ব্যবহার করা উচিত। নিয়ন্ত্রক বা প্রতিরোধক ঔষধ (যেমন: স্টেরয়েড ইনহেলার) নিয়মিত ব্যবহার বন্ধ করবেন না।

মাত্রাধিক্যতা

মাত্রাধিক্যতার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে গুরুতর কাঁপুনি, বুকে ব্যথা, খুব দ্রুত বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন এবং উচ্চ রক্তচাপ। এক্ষেত্রে অবিলম্বে চিকিৎসা সহায়তা প্রয়োজন।

বিপরীত

এর কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষেধক (antidote) নেই। গুরুতর ক্ষেত্রে, কার্ডিওসিলেক্টিভ বিটা-ব্লকার সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে এতে ব্রঙ্কোস্পাজমের ঝুঁকি থাকে। চিকিৎসা মূলত সহায়ক ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল।

সংরক্ষণ

ইনহেলারটি ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায়, সরাসরি তাপ ও সূর্যালোক থেকে দূরে রাখুন। এটিকে হিমায়িত করা যাবে না। শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন।